রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকারী শহীদ মনির হোসেনের নামে মেডিকেল কলেজে একটি হল নামকরণ ও তার পরিবারকে পুর্নবাসন করার দাবীতে মানববন্ধন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখা।
বুধবার (১১ জানুয়ারী) দুপুরে রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের সামনে ঘন্টাব্যাপী এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা সভাপতি মো: হাবীব আজম এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোলায়মান, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহ-সভাপতি কাজী মোহাম্মদ জালোয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার নেতা মো: শহীদুল ইসলাম, পাবলিক কলেজের ছাত্র নেতা মো: পারভেজ, ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার নেতা আরিফুল ইসলাম, কুলসুম আক্তার, রোজি আক্তার, লাভলু বড়ুয়া প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারী রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ চালুর আনন্দ শোভাযাত্রার সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএসের সন্ত্রাসীদের হামলায় নির্মমভাবে খুন হয় মনির হোসেন। তার আত্মত্যাগের বিনিময়ে রাঙ্গামাটিতে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কিন্তু এখনো মনিরের পরিবারকে দেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে কোন সুযোগ সুবিধা। তাই মনিরের অবদানকে স্মরনীয় করে রাখতে মেডিকেল কলেজের একটি হল শহীদ মনিরের নামে নামকরণ করাসহ তার পরিবারকে সরকারি চাকরি দেওয়া ও পুনর্বাসনের জোর দাবি জানান।
এসময় বক্তারা আরো বলেন, ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। সেদিনটি রাঙ্গামাটিবাসীর জন্য যেমন আনন্দদায়ক ছিল, তেমনি দিনটি ছিল সমানভাবে বিভিষিকাময়। একদিকে মেডিকেল কলেজের উদ্বোধন চলছিল অন্যদিকে রাঙ্গামাটি শহরের বনরূপা থেকে পার্বত্য জেলা পরিষদ পর্যন্ত স্থানটি ছিল আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন জেএসএস ও তাদের ছাত্র সংগঠন পিসিপি'র সন্ত্রাসীদের হিস্রতা আর উন্মত্ততার বিভিষিকাময়। সেদিন হিস্রতার বেড়াজালে তরুন যুবক মনিরের মতো একটি তাজা প্রাণ ঝরে যায়, আহত হয় জামাল হোসেনসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ। হিংসা হানাহানির রেশ ধরে পরিস্থিতি সামাল দিতে রাঙ্গামাটি জেলার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শহরে কারফিউ জারি করা হয়। তিনদিন রাঙ্গামাটি শহর ছিল নিরব নিস্তব্ধ এবং মৃত্যুপুরির মতো। মানুষ মেডিকেল কলেজ পাওয়ার সাথে সাথে কারফিউ দেখারও অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এই ইতিহাস একদিন মানুষ ভুলে যাবে। ইতোমধ্যে অনেকই ভুলেও গেছেন। কিন্তু রাঙ্গামাটি মেডিকেল কালেজের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং থাকবে। সেদিন থেকেই দাবি উঠেছিলো রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাস অথবা হলরুম যেকোন একটি মরহুম মনিরের নামে করা হোক। কিন্তু সেই দাবি এখনো উপেক্ষিত হয়ে আছে।
বক্তারা বলেন, অপার সম্ভাবনাময়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা বিস্তারের কর্মসূচি বাংলাদেশ সরকার যখনই হাতে নেয় তখনই এই জেএসএস (সন্তু) সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই বাধা শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রে নয়। সড়ক যোগাযোগ, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও সামাজিক অগ্রগতি সব ক্ষেত্রেই বাধা দান করে এই জেএসএস (সন্তু) সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেই সময় রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায়ও জেএসএস (সন্তু) সংগঠনের নেতাকর্মরা বাঁধা সৃষ্টি করেছিলো, তারা তাদের ছাত্র সংগঠন পিসিপিকে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে সেসময়ে তারা শিক্ষার্থীদের ও অভিভাবকদের হুমকি দিয়েছিলো। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষকে আধুনিকতা ও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে তাদের দমিয়ে রেখে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার করে ত্রাস সৃষ্টি করে রাখাই এদের মূল উদ্দেশ্য। মানববন্ধনে শহীদ মনিরের স্বরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।