চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে অফিস কক্ষে হামলার শিকার হয়েছেন সাবরেজিস্ট্রার মোঃইউসুফ আলী। ১০ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হামলার আধা ঘন্টা পূর্বে শাসিয়ে এবং মারপিটের হুমকি দিয়ে এসেছিলেন ইউএনও বলে অভিযোগ উঠেছে। এরপর পরই সাবরেজিস্ট্রার মোঃ ইউসুফ আলীর অফিস কক্ষে গিয়ে দলিল সম্পাদনের সময় হামলা করে অজ্ঞাত কয়েকজন ব্যক্তি। হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় ইউসুফ আলীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মাথায় ১৫-১৬টি সেলাই পড়েছে।
মোঃ ইউসুফ আলী অভিযোগ করেছেন, তার ওপর হামলার সঙ্গে ইউএনও মোঃ আবুল হায়াত নিজেই জড়িত। ইউএনওকে আসামি করে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
বিষয়টি নিয়ে শিবগঞ্জের ইউএনও আবুল হায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পেনসনের বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেছিলাম। তাঁকে শাসানোর বিষয়টি সঠিক নয়। তার অফিসে গিয়ে কথা বলেছি মাত্র। এ সময় কথাকাটাকাটি হয়েছে মাত্র। সাবরেজিস্ট্রারই উল্টো হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে মারপিট করতে যান। সাবরেজিস্ট্রারই আমাদের উল্টো হুমকি দিয়েছিনে। তার পরেও পরিস্থিতি শান্ত করে চলে এসেছি।
ইউএনও বলেন, ‘সাবরেজিষ্ট্রারের ব্যবহারের কারণে তিনি মার খেয়েছেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তার দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভাতেও এসব উঠেছে। তবে তাঁর সঙ্গে যে আচরণ হয়েছে, সেটি ঠিক হয়নি। তাঁর উপর হামলার সঙ্গে আমি কোনোভাবেই জড়িত নয়।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী মোঃ জুবায়ের আহম্মদ রাত আটটার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সেখানে দলিল লেখক, নকলনবিশ ও জমিসংক্রান্ত কাজে আসা সাধারণ মানুষ ছিলেন। কে বা কারা তাঁর ওপর হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে হামলা করেছেন, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে ঘটনাটি সম্পর্কে ধারণা পাবেন বলে জানান ওসি। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার মোসাঃ আফসানা বেগম বলেন, ‘ঘটনার আধা ঘন্টা আগে ইউএনও দলবল নিয়ে গিয়ে সাবরেজিস্ট্রার মোঃ ইউসুফ আলীকে শাসিয়ে এসেছিলেন। তাঁকে মারপিটের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি মোঃ ইউসুফ আলী আমাকে তাৎক্ষণাৎ ফোনে জানিয়েছিলেন। শাসিয়ে আসার সময় ইউএনও মোঃ ইউসুফ আলীর ফোনটিও ছিনিয়ে নিয়ে এসেছেন। ওই ফোনটি এখনো ইউএনও তাঁর কাছে রেখেছেন। এসব ঘটনা আমি জেলা প্রশাসক স্যারকে জানিয়েছিলাম। জেলা প্রশাসক স্যার বিষয়টি দেখবেন বলেছিলেন। কিন্তু তার পর পরই সাবরেজিস্ট্রারের ওপরে ন্যাক্কারজনক ভাবে হামলা করা হয়েছে।
জেলা রেজিস্ট্রার আফসানা বেগম আরও জানান, মোঃ ইউসুফ আলীকে মারপিট করা হয়েছে শিবগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রার অফিসের সাবেক প্রয়াত এক কর্মচারীর পেনসনের ফাইল পাশ করার ঘটনা নিয়ে। ওই কর্মচারী ২০১৪ সালে অবসর নেন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি মারা যান। এখন তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বোন এসে পেনসন দাবি করছেন। কিন্তু ওই স্ত্রীর কোনো কাবিন নামা দেখাতে পারেননি তাঁরা। এ নিয়ে মূলত ফাইলটি ছাড়তে পারছিলেন না সাবরেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী। আর ওই ফাইল ছাড়ার জন্য ইউএনও মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে ইউসুফ আলীর খাস কামারায় গিয়ে তাকে শাসিয়ে আসেন। এ সময় ইউসুফের এক কর্মচারীকেও সার্টের কলার ধরে ইউএনও মারপিটের হুমকি দিয়েছিলেন। তার আধা ঘন্টা পরই ঘটে হামলার ঘটনা। কাজেই এর সঙ্গে অন্য কোনো ঘটনার সম্পৃক্ততা নাই। ইউএনও এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলেও দাবি করেন আফসানা বেগম।
তিনি বলেন, এই ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাজে যোগদান করবো না বলে জানান। এ ঘটনায় বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওহিদুল ইসলাম ও মহাসচিব এস এম সফিউল বারী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে তীব্র নিন্দা ও দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুষ্ঠ বিচার না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশ, জেলা ও উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়া হয়।