কুয়াকাটা সৈকতে বছরে আট হাজার ৩৯৫ কেজি ছেঁড়া জালের বর্জ্য ফেলা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্যতো আছেই। ফলে নয়নাভিরাম এ সৈকত এলাকার পরিবেশ প্রতিবেশ জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। বাড়ছে ক্রমশ দূষণের মাত্রা। ওয়ার্ল্ডফিশ ইউএসএইড ইকোফিশ-২ একটিভিটি ২০২২ সালের এক সমীক্ষায় এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি জানান, তাদের সংস্থার উদ্যোগে কলাপাড়ায় জেলে পরিবারের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২৪ জনকে নিয়ে ‘ব্লু-গার্ড’ স্বেচ্ছাসেবী দল গঠণ করা হয়। মৎস্যজীবি সম্প্রদায়ের এই যুবকরা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এবং আশেপাশের এলাকা থেকে ২০২২ সালে সপ্তাহে এক দিন করে বছরের ৪৮ দিনে মোট ১০৯৩ কেজি ছেঁড়া জালের বর্জ্য অপসারণ করেছেন। যেখানে গড়ে প্রতিদিন ২৩ কেজি করে এই ছেঁড়া জাল অপসারণ করা হয়। এ ছাড়া প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিনের ব্যাগ, চিপস-চানাচুর-বিস্কুটের মোড়ক, ডাবের খোসাও অপসারণ করা হয়েছে।
ব্লু-গার্ড মোঃ মানিক মিয়া জানান, জীবিকার প্রয়োজনে তারা নদী ও সাগরের ওপর নির্ভরশীল কিন্তু বিপজ্জনক ছেঁড়াজাল, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনার কারণে সামুদ্রিক জীব-বৈচিত্র ধংশ হয়ে যাচ্ছে। এসব আবর্জনা অপসারণ করে সৈকতসহ সাগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে তাঁরা ইকোফিশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
ইকোফিশের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন,‘ সমুদ্রপৃষ্ঠের ৭১ ভাগ জুড়ে রয়েছে সাগর, যা দূষণমুক্ত রাখা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীববৈচিত্র সংরক্ষণ এবং সাগর দূষণ কমানোর লক্ষ্যে ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশের ইকোফিশ-২ অ্যক্টিভিটি কলাপাড়ায় যুবদের নিয়ে ব্লু-গার্ড গঠণ করা হয়েছে। এর সদস্যদের সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার এবং সামুদ্রিক জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণের বিভিন্ন বিষয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট জার্সি, ট্রাউজার, ক্যাপ এবং জুতাসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ। প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কার্যক্রমের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে যুক্তরা ব্লু-গার্ড সদস্যদের কাছ থেকে সংগৃহীত প্লাস্টিক সামগ্রী সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া অন্যান্য পচনশীল বর্জ্যগুলো নিরাপদ স্থানে ডাম্প করা হয়।
ব্লু-গার্ড সদস্যদের এমন উদ্যোগের ফলে কলাপাড়ার উপকূলীয় ইকোসিস্টেম সুরক্ষার মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়ক হয়েছে। এ কাজে দেশের উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় আরও ১০০ জনকে যুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০ ভাগ নারী রয়েছেন। ইকোফিশের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কলাপাড়ার সচেতন মানুষ।