ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের (সরাইল-আশুগঞ্জ) উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ১৩ প্রার্থী। শনিবার সকাল ১১ টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক শাহগীর আলমের কাছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তিন আ.লীগ নেতা। ১৩ থেকে এখন প্রার্থীর সংখ্যা ৫ জন। সংসদ সদস্য থেকে সাত্তারের পদত্যাগের পরই দল থেকে পদত্যাগ। আবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে স্বতন্ত্র মনোনয়ন ক্রয় ও জমা। এতে সাত্তারের উপর চরম ভাবে ক্ষেপেছেন স্থানীয় বিএনপি। উনাকে অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করেছেন। তবে দলটির সাবেক নেতারা আছেন সাত্তারের সাথে। আলোচনায় আলামতে সম্ভাব্য এমপি হলেও মাঠে এখনো দেখা মিলছে না উকিল আবদুস সাত্তারের। ওদিকে জনসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা, আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি’র সভাপতি আবু আসিফ, জাপা’র প্রার্থী আবদুল হামিদ ও জাকের পার্টির জহিরূল ইসলাম জুয়েল। একাধিক প্রার্থী বলছেন প্রহসনের নির্বাচন করে এই মূহুর্তে শেখ হাসিনার সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হতে যাবে না। অনুসন্ধানে ও দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, মঈন উদ্দিন মঈন ও মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জমা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এতে করে নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় সাধারণ ভোটার সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে সন্দেহ আরো ঘণিভূত হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিষ্টার রূমিন ফারহানার দেয়া বক্তব্য সরকার বিএনপিকে বিতর্কিত করতে চাপ দিয়ে সাত্তারকে দল থেকে পদত্যাগ করিয়েছেন। এমপিও নির্বাচিত করতে পারেন। এই বক্তব্যকে এখন অনেকেই সত্য বলছেন। নতুবা উম্মূক্ত ঘোষণা দিয়ে আবার তিন প্রার্থীকে প্রত্যাহার করাবেন কেন? তিন প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারের কথা স্বীকার করে জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার বলেন, যেহেতু দল এখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দেয়নি। এখানে আওয়ামী লীগের কেউ নির্বাচন করা সমিচীন নয়। বর্তমানে এই আসনে আলোচনার শীর্ষ ব্যক্তি উকিল আবদুস সাত্তার। নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় বিএনপি বা অঙ্গসংগঠনের কারো সাথে এখনো কোন বলেননি সাত্তার। নির্বাচনী এলাকার কোন ভোটারের সাথে কথাও বলেননি। দেখা মিলছে না জনসংযোগেও। মনোনয়নপত্র জমা করেছেন তাঁর ছেলে তুষারকে দিয়ে। আবার অনেকেই বলছেন শাররীক ভাবেও অসুস্থ তিনি। গত ৪ বছর এমপি থাকাকালে দলীয় দায়িত্বশীল কোন লোকের সাথে যোগাযোগ না করার এন্তার অভিযোগ ওঠছে এখন সাত্তারের বিরূদ্ধে। ওঁর নিজ ইউনিয়ন পাকশিমুল বিএনপি’র সভাপতি আবদুর রউফ বলেন, কারো সাথে পরামর্শ না করে যা ইচ্ছে তা করলেই হবে? আমরা উনাকে ভোট দিব না। আর এখন তো দেশে গণতন্ত্র নেই। ভোট লাগেও না। সরকার চাইলে তো উনি পাশ করবেনই। নোয়াগাঁও ইউপি বিএনপি’র সভাপতি মো. হারূন মিয়া বলেন, উনি দলের সাথে বেঈমানি করেছেন। নিজের স্বার্থের জন্য এমন নেক্কারজনক কাজ করতে পারেন? উনি ব্যক্তি ইমেজে দলের ইমেজে ৪ বার এমপি হয়েছেন। আর নয়। ৩০ বছর উপজেলা বিএনপি’র দায়িত্বশীল পদে থাকা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান বলেন, জীবনের শেষ বয়সে দল ত্যাগ করা ঠিক হয়নি। দল করলে দল নীতি আদর্শ মানতে হবে। আমরা দলের বাহিরে গিয়ে উনাকে ভোট দেয়ার প্রশ্নই আসে না। আরেকটি সূত্র জানায়, এলাকায় সাত্তারের দেখা মিলুক আর না-ই মিলুক এখানকার উপনির্বাচনে পাশ করবেন সাত্তারই। প্রতীক পাওয়ার পর তিনি মাঠে আসবেন। এমনকি তিনি (সাত্তার) উপমন্ত্রীও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাবেক এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা ও আবু আসিফ আহমেদ বলেন, অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ্যু নির্বাচন সকলেরই প্রত্যাশা। আমরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। হঠাৎ করে ৩ প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার মানুষকে কিছুটা ভাবনায় ফেলেছে। তবে আমাদের বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রহসনের নির্বাচন করে দেশে ও আন্তর্জাতিক ভাবে সমালোচনা হউক সেটা নিশ্চয় চাইবেন না। প্রসঙ্গত: গত ১১ ডিসেম্বর উকিল আবদুস সাত্তার ভূ্ইঁয়া জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় আসনটি শুন্য হয়ে যায়। আগামী ১ ফেব্রƒয়ারি এই আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহন গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।