শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলায় মাটির নিচ দিয়ে পাইপ লাইনের নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে কৃষকদের মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। জাইকার ক্ষুদ্র পানিসম্পদণ্ড২ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুলা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত মহারশি নদীর হলদিগ্রাম থেকে শুরু হয়েছে এর নির্মাণকাজ। পাইপ লাইনটি নির্মাণ করা হলে পাহাড়ি এলাকার প্রায় ৫শ একর অনাবাদি জমি সেচ সুবিধার আওতায় আসবে। সুবিধাভোগী কৃষকরা জানান, নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের সমশ্চুড়া, কোচপাড়া, জাঙ্গালপাড়া ও মানিককুড়াসহ আরও কয়েকটি এলাকায় ওই পানি সরবরাহ করা হলে তাদের সেচের কোনো সমস্যা হবে না। এ প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়ার আগে স্থানীয় কৃষকরা বিএডিসিসহ অন্যান্য সেচ প্রকল্পের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে পানি ক্রয় করত। তাদের কাছ থেকে পানি নিতে একরপ্রতি গুনতে হতো ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। আর জাইকার অর্থায়নে এ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত পাইপলাইনের পানিতে কৃষককে দিতে হবে একরপ্রতি মাত্র ৩ হাজার টাকা। স্বল্পমূল্যে পানি পাওয়ায় কৃষদের উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাবে। নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ সমস্ত এলাকায় মাটির নিচে পাথর থাকার কারণে গভীর-অগভীর কোনো নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে এসব পাহাড়ি এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যায় কয়েকশ ফুট নিচে। ফলে ২০১০ সালে সেচের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পোড়াগাঁও ইউনিয়নের সমশ্চুড়া গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছোট্ট একটি খালে (অঞ্জনা ঝুড়া) একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করে প্রায় ১শ একর অনাবাদি পাহাড়ি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। এই সেচ সুবিধার অভাবে যুগ যুগ ধরে এসব এলাকার পাহাড়ি জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর রাবার ড্যামের অনেক পানি অপচয় হয়। পানির অপচয় রোধে জাইকার পক্ষ থেকে কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধনের লক্ষে ২০১৬ থেকে অপচয় হওয়া পানি কাজে লাগিয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি বাড়াতে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে চালানো হয় জরিপ কাজ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মতিয়া চৌধুরীর দিকনির্দেশনায় পোড়াগাঁও ইউনিয়নের অনাবাদি ওই পাহাড়ি জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে জাইকার ক্ষুদ্র পানিসম্পদ প্রকল্পণ্ড২-এর আওতায় ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে মাটির নিচ দিয়ে পাইপ লাইন নির্মাণকাজ হাতে নেয় এলজিইডি। নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী মো. রকিবুল আলম রাকিব বলেন, পাইপ লাইনের নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, চলতি মৌসুমেই পাইপলাইনের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। আধুনিক পদ্ধতিতে নির্মিত পাইপলাইনের মাধ্যমে সুইচ টিপে কৃষকদের ক্ষেতে পানি দেওয়া হবে। এতে কৃষকরা পাবেন স্বল্পমূল্যে পরিবেশবান্ধব সেচের সুবিধা।শেরপুর স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই পাইপ লাইনের পানিতে ওই এলাকার অনাবাদি ৫শ একর পাহাড়ি জমি আবাদের আওতায় আসবে। কৃষকরা পাবেন স্বল্পমূল্যে সেচ সুবিধা। কৃষিক্ষেত্রে আসবে ব্যাপক উন্নয়ন ও পরিবর্তন।