দেশে চায়ের রাজধানী খ্যাত ও অন্যতম চা শিল্পাঞ্চল উপজেলা শ্রীমঙ্গলে গত ২৪ ঘন্টায় তাপমাত্রা আরো নেমেছে। বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেছে। কনকনে শীত আর ঠাণ্ডায় জনজীবনে বেড়েছে দুর্ভোগ। সকালে স্কুল-কলেজ গামী ছাত্র-ছাত্রীদের কষ্ট বেড়েছে। দেশের শীতলতম স্হান হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শীত জেঁকে বসেছে। কনকনে ঠাণ্ডা আর শীতে চা-শ্রমিকসহ ছিন্নমুল আর খেটে খাওয়া মানুষের জবুথবু অবস্হা। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই শীত অনুভুত হতে থাকে। রাত বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে শীত। তবে সকালে সুর্য উঠে যাওয়ায় বাড়তে থাকে তাপমাত্রা। তখন শীত অনুভুত হয় কম।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় এখানে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬ টায় এখানে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষন কেন্দ্রের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক বিভলু চন্দ্র দাস এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, বুধবার শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ রেকর্ডকৃত ৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই চলতি শীত মৌসুমে এখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ঢাকা আবহাওয়া অফিস জানায়, ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি ৩.৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। স্হানিয় আবহাওয়া অফিস জানায়, ২০০৩ সালের ২৩ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি এবং ২০০৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও ১৯৯৫ সালের ৪ জানুয়ারি ও ২০০৭ সালের ১৭ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত ক'দিন ধরে শীত জেঁকে বসেছে শ্রীমঙ্গলে। ২০৫ টি গ্রাম, ৯টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভা ও ছোট-বড় ৪৪ টি চা-বাগান নিয়ে গঠিত শ্রীমঙ্গল উপজেলায় শীতের কারণে সাধারন জীবনযাত্রায় দুর্ভোগে পড়েছেন অসহায়, দরিদ্র, ছিন্নমুল ও খেটে খাওয়া মানুষ। বিশেষ করে উপজেলার চা-বাগানগুলোতে শীতের তীব্রতা বেশি। এছাড়াও রাতে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে শ্রীমঙ্গল। রাতের বেলা প্রচন্ড শীত অনুভুত হলেও সকালে সুর্য ওঠে যাওয়ায় দিনের বেলায় তেমন শীত অনুভুত হয় না।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রন) ডা. পার্থ সারথী সিংহ জানান, উপজেলায় অনেকেই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমন দেখা দিয়েছে। বাচ্চাদের ডায়রিয়ার প্রবনতা বেড়েছে। অ্যাজমাজনিত রোগে আক্রান্ত বয়স্করা বেশি আসছেন হাসপাতালে। এছাড়াও জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানিয়েছেন ডা. পার্থ।
এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ৪ হাজার ৪০০ কম্বল বিতরন করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, পর্যায়ক্রমে উপজেলায় গরিব ও শীতার্ত মানুষের মাঝে আরো কম্বল বিতরন করা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ব্যাংক, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা উপজেলার বিভিন্ন স্হানে শীতবস্ত্র বিতরন করছে।