দেশে বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাস বিল বকেয়া বাড়ছে। গত আগস্টে ৬টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকের ৯৩৭ কোটি টাকা গ্যাস বিল বকেয়া ছিল। অক্টোবরে এসে তা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকায়। আর গত ডিসেম্বর শেষে তা আরো বেড়েছে। গ্যাসের বকেয়া বিল আদায়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রগতি আনতে পারছে না। বরং দেশে চলমান জ্বালানি ঘাট্িরত মধ্যেও বাড়ছে বকেয়া গ্যাস বিলের পরিমাণ। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
গংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের ৬টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে অনাদায়ি পাওনা ছিল ৯ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। আর ২০২২ সালে বেসকারি খাতের বকেয়া বিপুল পরিমাণে আদায় করা হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে তা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) কাছে বিপুল পরিমাণ অনাদায়ি পাওনা রয়েছে। ভর্তুকির অর্থ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় না করায় বেড়েছে পিডিবির বকেয়া। আর আর গত জুনে সার কারখানায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা নির্ধারণ করা হলেও কারখানাগুলো আগের মূল্যহার অনুযায়ী বিল পরিশোধ করেছে। ফলে বিল আদায়ে ঘাটতি বেড়ে গেছে। সরকার সার উৎপাদন পর্যায়ে ভর্তুকি দেবে না বলেই সার কারখানার গ্যাসের দাম অপেক্ষাকৃত বেশি বাড়ানো হয়েছিল। তাছাড়া সচিবালয়েও গত ডিসেম্বর শেষে গ্যাস বিল বকেয়া রয়ে গেছে প্রায় ৯০ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গ্রাহকরা দেশের সিংহভাগ গ্যাস ব্যবহার করে। বাকি সবগুলোর বিতরণ কোম্পানির চেয়ে সংখ্যার বিচারেও তিতাসের গ্রাহকসংখ্যা বেশি। প্রতিষ্ঠানটি গত অক্টোবরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ৯৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা মূল্যের গ্যাস বিক্রির ৬০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। আদায়ের হার ৬৩ শতাংশ। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১ হাজার ৪৬১ কোটি টাকার বিক্রির বিপরীতে আদায় ১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। আদায়ের হার ১০৮ শতাংশ। অর্থাৎ ওই সময়ে বেসকারি খাত থেকে পুরোনো বকেয়া বিলও আদায় করা হয়েছে। বকেয়া পরিশোধের জন্য সব গ্রাহককে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে চিঠি-নোটিশ দেয়া হয়েছি। তাতে নির্ধারিত সময়ে যারা বিল পরিশোধ করছে না তাদের গ্যাস-সংযোগ কেটে দেয়া হবে বলে জানানো হয়।
সূত্র আরো জানায়, দেশে উৎপাদিত ও বিক্রীত গ্যাসের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৪৩ শতাংশ, শিল্পণ্ডকারখানায় ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, বাসাবাড়িতে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, শিল্পণ্ডকারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে (ক্যাপটিভ পাওয়ার) ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ, সার উৎপাদনে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, সিএনজি স্টেশনে ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, বাণিজ্যিকে দশমিক ৭৬ শতাংশ ও চা-বাগানে দশমিক ১০ শতাংশ ব্যবহৃত হয়।
সূত্র আরো জানায়, গ্যাস খাতের সংস্থা-কোম্পানিগুলোর অনাদায়ি পাওনা সংক্রান্ত একটি সভা গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় জানানো হয়, গত বছরের আগস্টে ৯৩৭ কোটি টাকা বকেয়া ছিল, যা অক্টোবরে ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ওই সময় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বকেয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। সার কারখানাগুলো নতুন মূল্যহার অনুযায়ী বিল পরিশোধ না করায় বকেয়ার পরিমাণ বেড়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে পিডিবির বকেয়াও। তবে বেসরকারি খাতে আদায়ের পরিমাণ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। সভায় বকেয়া আদায়ের বিষয়টি যথাযথভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে না বলে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়।
এদিকে এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জানান, পিডিবি এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) কাছে গ্যাস বিল বকেয়ার একটি বড় অংশ রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওই দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বকেয়া আদায়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। তাছাড়া মামলার কারণে যেসব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বিল বাকি রেখেছে সেগুলোও মীমাংসার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া কোন গ্রাহকের কাছে কত পরিমাণ বিল বাকি রয়েছে তার কারণসহ তালিকা দেয়ার জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ প্রদান করা হবে। শিগিগরই বকেয়া বিল আদায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।