প্রথমবার আয়োজিত নারী অনূর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশর পক্ষে সুপার সিক্স নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে যাঁরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন,তাদের মধ্যে অন্যতম একজন জামালপুরের স্বর্ণা আক্তার। স্বর্ণা দলের সহ-অধিনায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। সে জেলার জামালপুর পৌর শহরের কাচারীপাড়া মুসলিমাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম বাদল মিয়া,মাতার নাম শাহিদা বেগম। পিতা-মাতার চার সন্তানের মধ্যে স্বর্ণা আক্তার সবার কনিষ্ঠ। বংশ হউক যথাযথ,কর্ম হউক ভাল। বাদল মিয়া সেলুনে কাজ করেন। পেশায় নরসুন্দর। মা গৃহিনী। বড় ভাই বিবাহিত ক্ষুদ্র বিক্রেতা। ছোট ভাই বেকার। বড় বোন সোহানা আক্তার বিয়ে হয়েছে নেত্রকোণার মদনপুর। অতি দরিদ্র ভূমিহীন পরিবারের সন্তান স্বর্ণা।
মা শাহিদা বেগম জানায়, তারা স্বপরিবারে কাচারীপাড়া মুসলিমাবাদ এলাকার বাসিন্দা রিয়াজুল ইসলাম মিলনের বাসায় ভাড়া থাকেন। ৬ সদস্যের পরিবারের সংসার,বাবা সারা দিনে যতটুকু আয় রোজগার করেন,তাই দিয়ে চলে তাদের সংসার। শৈসব কাল থেকে তাদের দিন কাটে অনাহারে অর্ধহারে। তিনি আরো জানান,স্বর্ণা সিংহজানী কাচারীপাড়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাঠ চুকিয়ে সিংহজানী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ষ্ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে বর্তমানে ঐ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে পড়ালেখা করছেন। তিনি আরো বলেন, স্বর্ণা বাল্যকাল থেকেই খেলার প্রতি তার ঝোঁক ছিল খুবই বেশী। লেখাপড়ার ফাঁকে সে ক্রিকেট খেলতো। স্বর্ণার সর্ম্পকে মামা জুয়েল মিয়া (অপেশাদার ক্রিকেটার) তিনি প্রতিদিন স্বর্ণাকে ক্রিকেট খেলা শিখাতেন। সেই তার খেলার উস্তাদ। কিন্তু দরিদ্র ঘরের সন্তান হিসাবে স্বর্ণার ক্রিকেট খেলা পছন্দ করতেন না অধিকাংশ মানুষ। তাই ক্রিকেট খেলা অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। এজন্য প্রতিনিয়ত নানা জনের নানাা কথা শুনতে হয়েছে তাকে। অনেক বকাঝকা করে খেলা থেকে দমাতে পারেনি কেউ। মেয়ের জন্য আমি এবং তার বাবা অনেকের কাছে নানাবিধ কথা শুনে হজম করতে হয়েছে বলে জানান।
আইসিসি উইমেন্স আন্ডার-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশর পক্ষে আপনার মেয়ে ক্রিকেট খেলে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেশের জন্য সুনাম বইয়ে আনছে,তাতে আপনার প্রতিক্রিয়া কি? জানতে চাইলে মা শাহিদা বেগম প্রথমে খুশিতে আবেগ আপ্লুত হয়ে অশ্রুসিক্ত জলে বলেন,অভাবী সংসারে সন্তানদের কখনও তিন বেলা খাওন দিতে পারিনি। ভালা কাপড়চোপড় দিতে পারিনি। ইসকুল থেকে আইসে মেয়েটা না খাইয়ে খেলতে গেছে। খেলার জন্য মেয়েডারে অনেক বকাঝকা করছি,তাও মানে নাই খেলতে গেছে। আজ আমার মাইয়া ভাল খেলছে,বলে যারা বাঁকা চোখে দেখছে,আজ তারা সবাই আইসে বলে তোমার মেয়ে খুব সুন্দর খেলতাছে। ভাল খেলার জন্য আমি অত্যান্ত খুশী। তার বাাবা বাদল মিয়া বলেন,আমার মেয়ে খুবই ভাল খেলছে।তবে এখন পর্যন্ত জেলা ক্রীড়া সংস্থা কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার সাথে যোগাযোগ করেনি। তবে আমার মেয়ে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবেন এই প্রত্যাশাই করছি। আমি আমার মেয়ের প্রতি অত্যান্ত আনন্দিত এবং গর্ভিত।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে জামালপুরের বিশিষ্ট সমাজ সেবক,মানবাধিকাকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন,স্বর্ণা দরিদ্র ঘরের সন্তান,বিভিন্ন প্রতিবন্ধকর্তাা সত্তে¦ও খেলা শিখে আজ আর্ন্তজাতিক বিশে^ দেশের সুনাম বয়ে আনছে। তাই দেশের স্বার্থে,দেশের উন্নয়নের স্বার্থে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের খেলাধুলা-বাকস্বাধিনতা দিতে হবে।তাহলে দেশের উন্নয়ন দ্রুত ত্বরানিত্ব হবে বলে বিশ্বাস করি।
এ বিষয়ে জামালপুরের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান,জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি,জেলা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ বলেন,স্বর্ণা আমাদের মেয়ে।জামালপুরের মেয়ে,হিসাবে আমি অত্যান্ত আনন্দিত ও গর্বিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারীদের সমঅধিকার দিয়ে খেলাধুলাসহ সকল ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের সম্পিক্ত করে সকল ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই আমি তারপ্রতি ধন্যবাদণ্ডকৃতজ্ঞতা জানাই।পাশাপাশি স্বর্ণার প্রতি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। তিনি আরো বলেন,আমি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসাবে আমার সাধ্য মতে,স্বর্ণার পরিবারের পাশে থাকার সচেষ্ট থাকার পুর্ণব্যক্ত করেন।
ওয়ার্ল্ড কাপে বাংলাদেশের মেয়েরা ইতোমধ্যে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার সিক্সে উত্তীর্ণ হয়েছে স্বর্ণা আক্তার নেতৃত্বাধীন দলটি। স্বর্ণা আক্তার মূল আসরের চ্যালেঞ্জ নিয়ে একাই স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রান করে দলকে টেনেনিয়েছেন। প্রায় প্রতিটি খেলায় স্বর্ণার দুর্দান্ত ব্যাটিং এ ৪৮ বলের মুখোমুখি হয়ে ছক্কার ঝড় তোলে সাত ছক্কা দুটিতে চার শট মারেন। দিশা বিশ্বাসের দলে স্বর্ণার ব্যটিং ছোঁয়া বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটে দেখাচ্ছে সঠিক স্বর্ণের ঝলমল উজ্জ্বল আলো। স্বর্ণার ছোঁয়া ব্যাটিং ঝড়ে,আর্ন্তজাতিক বিশে^ তাক লাগিয়ে আবারও নতুন করে বাংলাদেশের পরিচিতি তোলে ধরে দেশ-জাতি এমনকি মাতৃভূমির সুনাম বয়ে আনছেন। অথচ বাস্তবে স্বর্ণা কি পারবে? তার অভাবী পরিবারের স্বপ্ন পুরণ করতে। সে কি পারবে? তার পরিবারের দুঃখ ঘোচাতে? এ বিষয়ে সুধীমহল মনে করেন, রাষ্ট্রসহ সকলের উচিত,এমন প্রতিভাবান মেয়েকে সরকারী খরচে খেলায় উচ্চতর প্রশিক্ষনসহ তার পরিবারের সাবলম্বি করে গড়ে তোলা একান্ত অপরিহার্য্য বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।