দেশের অন্যতম চা শিল্পাঞ্চল ও হাওর পরিবেষ্টিত উপজেলা শ্রীমঙ্গলে গত ২৪ ঘন্টায় তাপমাত্রা আরো নেমেছে। শুক্রবার শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। কনকনে শীত আর ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবি মানুষ। গত ৩ দিন ধরে এখানে তাপমাত্রা ৫ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।
দেশের শীতলতম স্থান হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শীত জেঁকে বসেছে। তীব্র শীতে কাঁপছে শ্রীমঙ্গল। কনকনে ঠান্ডা আর শীতে চা-শ্রমিকসহ ছিন্নমুল আর খেটে খাওয়া মানুষের জবুথবু অবস্থা। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই শীত অনুভুত হতে থাকে। রাত বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। তবে সকালে সূর্য উঠে যাওয়ায় বাড়তে থাকে তাপমাত্রা। তখন শীত অনুভুত হয় কম।
শুক্রবার সকাল ৬টা ও ৯টায় এখানে চলতি মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বৃহস্পতিবার এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান আনিস এসব তথ্য জানিয়েছেন।
আনিসুর রহমান আরো জানান, শ্রীমঙ্গলের ওপর দিয়ে মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজ দুপুর ১২ টায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২ কিলোমিটার। সকাল ৯ টায় বাতাসের আদ্রর্তা ছিল ৯০ শতাংশ। তিনি জানান, এ অবস্থা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
ঢাকা আবহাওয়া অফিস জানায়, ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি ৩.৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানায়, ২০০৩ সালের ২৩ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি এবং ২০০৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও ১৯৯৫ সালের ৪ জানুয়ারি ও ২০০৭ সালের ১৭ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত ক'দিন ধরে শীত জেঁকে বসেছে শ্রীমঙ্গলে। তীব্র শীতে কাঁপছে শ্রীমঙ্গল। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গলের হাওরাঞ্চল ও চা-বাগানগুলোতে শীতের তীব্রতা বেশি। শীতের কারণে সাধারন জীবনযাত্রায় দুর্ভোগে পড়েছেন অসহায়, দরিদ্র, ছিন্নমুল ও খেটে খাওয়া মানুষ। এছাড়াও রাতে কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে শ্রীমঙ্গল। রাতের বেলা প্রচন্ড শীত অনুভুত হলেও সকালে সুর্য ওঠে যাওয়ায় দিনের বেলায় শীত অনুভুত হচ্ছে কম। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্য প্রবাহের কারণে বেড়েছে ঠান্ডার তীব্রতা। বিপদে পড়েছে শ্রমজীবি মানুষ। রাতে তীব্র শীতের পর সকালে সূর্য ওঠে গেলে স্বস্থি নেমে আসে জনজীবনে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ( রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. পার্থ সারথী সিংহ জানান, উপজেলায় অনেকেই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমন দেখা দিয়েছে। বাচ্চাদের ডায়রিয়ার প্রবণতা বেড়েছে। অ্যাজমাজনিত রোগে আক্রান্ত বয়স্করা বেশি আসছেন হাসপাতালে। এছাড়াও জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানিয়েছেন ডা. পার্থ।
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ ড. মো: আবদুস শহীদ এমপি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে শীতার্থদের মাঝে শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণ করেছেন। এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজীব মাহমুদ মিঠুন, শ্রীমঙ্গলের এসিল্যান্ড সন্দ্বীপ তালুকদারকে সাথে নিয়ে উপজেলার দূর্গম এলাকা মোহাজেরাবাদ, জাম্বুরাছড়া, আশ্রয়ণ প্রকল্প ও নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মাঝে ঘরে ঘরে গিয়ে কম্বল বিতরণ করেছেন। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসন থেকে সমগ্র উপজেলায় শীতার্থ মানুষের মাঝে প্রায় পাঁচ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।