রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের বন্ধের নির্দেশ অমান্য করে আরএনবি (রাবেয়া এ- ব্রিকস) কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিন বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বারমল্লিকা আরএনবি ব্রিকসে গিয়ে দেখা যায়, কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। ভাটার কালো ধোয়া ছড়িয়ে পড়ছে ফসলের মাঠ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
গত ১৮ জানুয়ারী পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ ভবন, ২/১৬, আগারগাঁও শেরে বাংলা নগর, ঢাকা সদর দপ্তরের মনিটরিং এ- এনফোর্সমেন্ট উইংয়ের পরিচালক (উপসচিব) মোহাম্মদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফরিদপুর জেলা কার্যালয় কর্তৃক গত ১৭ অক্টোবর বারমল্লিকাতে অবস্থিত আরএনবি (রায়েরা এন্ড) ব্রিকস" নামক ইটভাটা সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। ভাটাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত স্থানে (শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিকটে) ইটভাটা স্থাপন ও কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এরূপ কার্যক্রম ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ এবং এর ক্ষতিপূরণ আদায়যোগ্য। ফলে গত ১৩ নভেম্বর, ২১ নভেম্বর ও ৪ ডিসেম্বর এ কার্যালয়ে শুনানীতে তলব করা হয়। কিন্তু শুনানীতে হাজির না হয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং-১৪১৮২/২০২২ দায়ের করেন। ইতোমধ্যে, পরিবেশ অধিদপ্তর, সদর দপ্তর, ঢাকার আইন শাখা কর্তৃক আলোচ্য রিট পিটিশনের বিষয়টি পর্যালোচনা পূর্বক পরিবেশ অধিদপ্তর, ফরিদপুর জেলা কার্যালয় কর্তৃক সরেজমিন পরিদর্শনকালে প্রাপ্ত তথ্য এবং ১৮ জানুয়ারী ভাঁটা মালিক হিসেবে মোঃ নাসির উদ্দিনের উপস্থিতিতে শুনানী শেষে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) এর ধারা-৭ এর আলোকে পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ক্ষতিসাধনের জন্য
২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেন। পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ক্ষতিসাধনের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ধার্যকৃত দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা গত ১৮ জানুয়ারী বাংলাদেশ সরকারের অনুকূলে মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা বরাবর ডিমান্ড ড্রাফট পে-অর্ডার মূলে জমাদান এবং গত ১৮ জানুয়ারী এ আদেশ প্রাপ্তির পর থেকে ইটভাটার সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। ব্যর্থতায় এনআরবি ব্রিকসের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একই সাথে উপণ্ডপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফরিদপুর জেলা কার্যালয়কে এ কার্যালয়ের আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়টি নিয়মিত। মনিটরিং করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী সদর, পাংশা, বালিয়াকান্দি, কালুখালী উপজেলাতে ইটভাটায় প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব চলছে। জেলার ৫টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভা এলাকায় ৯৯টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটার মধ্যে ৭৩টি অবৈধ। মাঝে মাঝে দু’একটি ভাটায় অভিযান চললেও বেশির ভাগ ভাটায় প্রকাশ্যে সকলকে ম্যানেজ করেই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
এনআরবি ব্রিকসের মালিক নাসির উদ্দিনকে ভাটায় পাওয়া যায়নি। ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে নাম না প্রকাশ করে বলেন, আমরা কাগজ হাতে পাইনি। ভাঁটা চালাচ্ছি, যদি ভেঙ্গে দেয় দিলে দিবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর, ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের উপণ্ডপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ১২০ ফিট বা অবৈধ ইটভাটা আছে। প্রতিবছর অভিযান পরিচালনা করে সেগুলোকে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। অবৈধ কাঠ পোড়ানোয় জরিমানা করা হয়েছে। ডিসি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে অবৈধ ইটভাটা ভেঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে কয়েকজন ম্যাজিষ্ট্রেট এ অভিযান পরিচালনা করেছেন।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, ইট পোড়ানো শুরুর আগে ভাঁটা মালিকদের ডেকে সভা আহবান করা হয়। সেখানে ইটভাটার নীতিমালা পড়ে শোনানো হয়। কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। আমাদের কাছে কোন কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ আসলে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।