সিলেটের হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজারের ঐতিহ্যের নিদর্শন হাজার-হাজার গজার মাছ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উত্তর ধানডোবা গ্রামের মরহুম ওয়াসেল ফকির ওরফে ওয়াসেল কারিকরের বাড়ির পুকুর ভর্তি হয়ে আছে।
প্রায় শতবছর ধরে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে নানা শ্রেণি ও পেশার অসংখ্য মানুষ ছুটে আসেন সিলেটের ন্যায় পুকুর ভর্তি গজার মাছ দেখার জন্য। এরমধ্যে কেউ কেউ রোগ মুক্তির আশায় মানত করে আসেন। প্রচলিত বিশ্বাসে তারা গজার মাছের খাবার হিসেবে ছোট মাছ ও মুরগি নিয়ে আসেন। আবার কেউ বিপদ আপদ থেকে মুক্তি ও রোগব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভের আশায় গোসল করেন গজার মাছের ওই পুকুরে। পুকুরের ঘাটলায় মানুষের উপস্থিতি টের পেলে এ মাছগুলো কিনারায় চলে আসে। ভয় পায় না, আনন্দ উল্লাস করে মানুষের হাত থেকে খাবার নিয়ে খায়। ফলে গজার মাছের জন্য ওই স্থানটি এখন পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের উত্তর ধানডোবা গ্রামের মরহুম ওয়াছেল ফকিরের বংশধর (পুতি) শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার পূর্ব পুরুষ ওয়াছেল ফকির ছিলেন সিলেটের হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজারের ভক্ত। সে সুবাদে তিনি প্রতিবছর ওরশের সময় সিলেট মাজারে আশা যাওয়া করতেন। সিলেটের হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজারের খাদেমের কাছে তিনি শত বছর পূর্বে মাজারের পুকুরের গজার মাছ নিয়ে নিজের পুকুরে লালন পালনের আবদার করেন। ওয়াছেল ফকিরের আবদার পূরণ ও তাকে খুশি করতে সিলেট মাজারের খাদেম গ্রামের খালবিল থেকে এক জোড়া গজার মাছ ধরে পুকুরে ছেড়ে লালন পালন করতে বলেন। পীর শাহজালাল (রঃ) আশীর্বাদে পুকুরের ছোট মাছ দুটো অলৌকিক কুদরতে হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজারের গজার মাছে পরিণত হবে বলে মাজারের খাদেম বলেন।
শহিদুল ইসলাম আরো বলেন, ওয়াছেল ফকির মাজারের খাদেমের কথা বিশ্বাস করে বাড়িতে ফিরে একজোড়া গজার মাছ ধরে পুকুরে ছেড়ে লালন পালন করেন। সময়ের ব্যবধানে তার পুকুর গজার মাছে ভরে যায়। সেই শত বছর পূর্ব থেকে অদ্যবর্ধি ধানডোবা ওয়াছেল ফকিরের বাড়ির গজাল মাছ সিলেট মাজারের গজাল মাছের ন্যায় এলাকার মানুষ ও ভক্তবৃন্দের কাছে পরিচিতি লাভ করে।
তিনি আরও বলেন, এই গজার মাছগুলো হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজারের আশীর্বাদের নেয়ামত। তাই আমরা সবসময় গজার মাছের পরিচর্যা ও সংরক্ষণ করে থাকি। এ মাছ কেউ ধরে খায়না। মারা গেলে মাটিতে পুতে রাখা হয়।
গৌরনদীর বার্থী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, ধানডোবা গ্রামের ওয়াছেল ফকিরের বাড়ির পুকুরের গজার মাছ দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত লোকজন আসে। যে কারণে এলাকায় ওই স্থানটি এখন পর্যটক স্পট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি আরও জানান, বিগত ১৯৮৮ ও ‘৯৮ এর বন্যার পানিতে পুরো পুকুর ডুবে গেলেও একটি মাছও অন্যত্র যায়নি। তাছাড়া মাছের কোনো সমস্যা হলে ওই বাড়ির বয়স্ক ব্যক্তিদের স্বপ্নে দেখানো হয় এবং সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকেন।