বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রয়োজন খাদ্য। মানুষের খাদ্যের প্রধান উৎস হচ্ছে কৃষি। কৃষিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা পৃথিবীতে একটা লম্বা সময় ধরে প্রচলিত হয়ে আসছে। বর্তমান শিল্প ভিত্তিক উৎপাদনের যুগেও কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। শুধু তাই নয় শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের একটা অন্যতম উৎস হচ্ছে কৃষিখাত। কৃষি নির্ভর দেশগুলোতে কৃষকই হচ্ছে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার প্রাণভোমরা। করোনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হলেও আমাদের খাদ্যশস্যের অভাবে না খেয়ে থাকা থেকে রেহাই মিলবে না। করোনার শুরুতে দুর্ভিক্ষের কথা কারো কারো মুখে শোনা গেলেও, আমাদের সৌভাগ্য আমাদের কৃষক, শত বিপদ ও দুর্যোগেও তারা পেশা ছাড়েননি। তারা মাঠে লড়াই জারি রেখেছেন। ফলে দুর্ভিক্ষ বা খাদ্যশস্য সংকটের হাত থেকে আমাদের রেহাই মিলেছে। উদ্বৃত্ত ফসল আমাদের মুখে হাসি এনে দিলেও কৃষকের মুখে হাসি ফোটেনি। কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম কখনই পায় নি। শুধু অভিযোগ নয়, এ আমাদের কৃষিক্ষেত্রে নির্মম সত্য। আমাদের কৃষকের আর্থিক দুর্দিন ফুঁড়োয় না। আমদের কৃষির দুরবস্থা শেষ হয় না। ফসল ফলাতে কৃষকের প্রয়োজন বীজ, সার, কীটনাশকসহ নানা উপাদান। সারের জন্য কৃষকের জীবন দেওয়ার নিষ্ঠুর উদাহরণও রয়েছে আমাদের দেশে। যদিও বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় সে ধরনের নিষ্ঠুর পরিস্থিতিতে কৃষককে আর পড়তে হয় না। আমাদের খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু বাজারে খাদ্যশস্যসহ নিত্যপণ্যের দাম কমেনি। এ ক্ষেত্রে কৃষক তার ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত। রাজধানীর বাজার গুলো দেখে মনে হতে পারে আমাদের কৃষি ও কৃষকের উন্নতি ঘটছে। কৃষক তার ফসলের দাম পাঁচ্ছে। তবে এ যে কতটা ভ্রান্ত ধারণা, তা টের পাওয়া যায় স্থানীয় পর্যায়ের বাজারগুলোতে। তবে এ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে বের করতে হবে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য শুরুতেই বাজারে শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন। নিয়ন্ত্রণ ফেরানোর পাশাপাশি কৃষি সমবায়ে কৃষককে উৎসাহিত করতে হবে। কৃষিভিত্তিক সমবায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চাষিরাও যেন শুধু অংশগ্রহণই নয়, বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যাতে করে কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। সেই প্রক্রিয়াটিকে সচল করার সঙ্গে সঙ্গে বাজারদর নির্ধারণ করা এবং তা যথাযথভাবে মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে কৃষিতে। কৃষকের দুর্ভোগ ও দুর্দশা ঘোচানোর জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। বাজারের চাহিদা নির্ধারণসহ ফসল উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে হয়তো কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন সর্বার্থে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলেই মনে করি।