গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রেখেই কার্যক্রম চালাচ্ছে দেশের বিপুলসংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের ৩০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাঁচার্য নেই। আর ৭৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপণ্ডউপাঁচার্য এবং ৪২টিতে কোষাধ্যক্ষ নেই। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ৩টি গুরুত্বপূর্ণ পদের একটি শূন্য থাকলেই শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি আর্থিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০৮টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। তার মধ্যে ৯৯টি বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু ওসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৬৯টি প্রতিষ্ঠানে আচার্য কর্তৃক নিয়োগ করা উপাঁচার্য ছিলেন। আর ২০২০ সালে ৯৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ওই সময় ৭৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাঁচার্য ছিলেন। ওই বছর নতুন ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত হলেও উপাঁচার্যের সংখ্যা কমেছে ৪ জন। শুধু উপাঁচার্য নয়, উপণ্ডউপাঁচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শূন্য রয়েছে। আর ওসব গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এমন অবস্থায় নিশ্চিত করা যাচ্ছে না শিক্ষার মানোন্নয়ন, গবেষণা ও আর্থিক স্বচ্ছতা। একই সঙ্গে ওসব পদ শূন্য রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ লঙ্ঘিত হচ্ছে। আইন অনুযায়ী ওসব পদে আচার্য কর্তৃক নিয়োগ নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০২১ সালে পরিচালিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই উপাঁচার্যের পদ শূন্য ছিল। তাছাড়া ৭৫টি প্রতিষ্ঠানে উপণ্ডউপাঁচার্যের পদ ফাঁকা এবং ৪২টিতে কোষাধ্যক্ষ নেই। মাত্র ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই তিনটি পদ পূরণ রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাঁচার্যের অন্যতম কাজ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন পাঠদান নিশ্চিত করা, শিক্ষকদের গবেষণায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তা তদারক করা এবং গবেষণার জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন তহবিল থেকে পর্যাপ্ত বরাদ্দের ব্যবস্থা করা। গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি করাও উপাঁচার্যের অন্যতম কাজ। আর উপণ্ডউপাঁচার্য মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্প মেয়াদি শিক্ষা কার্যক্রম পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করে। উপাঁচার্যের অনুপস্থিতিতে তিনি চলতি দায়িত্বও পালন করেন। তাছাড়া উপণ্ডউপাঁচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সূত্র আরো জানায়, আইন অনুযায়ী কোষাধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল তদারক ও অর্থসংক্রান্ত নীতি সম্পর্কে পরামর্শ দেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি ও বিনিয়োগ পরিচালনা করেন এবং বার্ষিক বাজেট ও হিসাব বিবরণী পেশ করার দায়িত্বে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব চুক্তিতে তিনি স্বাক্ষর করেন। বরাদ্দের অর্থ নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় তদারক করেন। তিনি সিন্ডিকেট, অর্থ কমিটি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির সদস্য।
এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতে, মূলত ৩টি কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাঁচার্য নিয়োগ দেয়া হয় না। তার মধ্যে প্রধানতম কারণ হচ্ছে ট্রাস্টি বোর্ডের ক্ষমতা চর্চা ও আর্থিক অনিয়ম। কারণ আচার্য থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত উপাঁচার্য না থাকলে ট্রাস্টি বোর্ডকে প্রশ্ন করার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোনো পদ থাকে না। উপণ্ডউপাঁচার্য চলতি দায়িত্ব পালন করেন বিধায় যখন-তখন তার পরিবর্তন হতে পারে। তাছাড়া উপাঁচার্য নিয়োগ না দেয়ার অন্য দুই কারণের মধ্যে রয়েছে নিয়োগে অনেক প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয় এবং নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য উপাঁচার্য পাওয়া কষ্টসাধ্য বিষয়।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, উপাঁচার্য, উপণ্ডউপাঁচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ ছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। ওসব পদে নিয়োগে আইন ও নীতিমালা রয়েছে। ফলে নিয়োগ ছাড়া এসব কার্যক্রম পরিচালনা বেআইনি। নিয়ম অনুসারে ওই তিন পদে নিয়োগের বিষয়ে ইউজিসি পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করে থাকে। কার্যত ব্যবস্থা গ্রহণে ওই প্রতিবেদন ও সুপারিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। যদিও জনবল সমস্যা ও নানা তদবিরসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় মন্ত্রণালয় থেকে অনেক ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন করা হয় না। অনিয়মের কারণে দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয় নিষিদ্ধ করা হলেও পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয় না।
এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন জানান, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাঁচার্য ও কোষাধ্যক্ষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় উপণ্ডউপাঁচার্যেরও ভূমিকা রয়েছে। সেগুলো সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত। ওসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির মতামত নেয়া প্রয়োজন। ওসব পদে কেউ না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। একদিকে যেমন অ্যাকাডেমিক স্বচ্ছতা থাকে না অন্যদিকে আর্থিক স্বচ্ছতা থাকে না।