খুলনার পাইকগাছায় সরকারের দেওয়া এক ভূমিহীন কৃষকের জমি কেড়েনিলো এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নে গড়েরডাঙ্গা গ্রামের মৃত মোন্তাজ মালীর কৃষক পুত্র আঃ রহিম মালী (৫১) এক একর কৃষি খাস জমি প্রথম ২০০০সালে একসনা বন্দোবস্ত পায়। সেই থেকে সে ধারাবাহিকভাবে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বন্দোবস্ত পেয়ে আসছেন। আর বন্দোবস্তকৃত জমিতে সে প্রায় ২৩ বছর ধান ও মাছ চাষ করে আসছেন। নজর পড়ে প্রভাবশালী কুচক্রি ভূমিদস্যু একই ইউনিয়নে ফতেপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য অবৈধ ইট ভাঁটা বিবিএম বিক্স’র মালিক মো. মান্নান গাজী (৫৩), কালিদাশপুর গ্রামের মো. মোখলেছ গাজী ওরফে মকর (৫০) ও তার দুর্দান্ত পুত্র মো. আনিস গাজী (৩৫)’র। ভূক্তভোগী কৃষক রহিম মালী গত বছর ১৬মে পাইকগাছা থানায় জিডি করেন, নং-৭৭৭। ওই জমি আ. রহিম মালী ২০১৩ সালে স্থায়ী বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের গড়েরডাঙ্গা মৌজায় এসএ ১ খতিয়ানে ১৬৪ দাগে ৪৫ ও ১৬৫ দাগে ৫৫ শতক দুই দাগ মিলে এক একর বিলান জমি। ওই কৃষি জমি মিস কেস ৪৪/২০১৩-১৪ মাধ্যমে ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্টরা একাধিকবার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন দেন। ২৭ এপ্রিল ২০১৬ সালে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার সাকিরুল ইসলাম প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ওই জমির উপর দিয়ে ইতপূর্বে খর¯্রােতা নদী/খাল প্রবাহিত ছিল যা কালের আবর্তে সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে উঁচু কৃষি জমিতে রুপান্তরিত হয়েছে। উঁচু কৃষি জমিতে রুপান্তরিত হওয়ায় রহিম মালী জমির চারপার্শ্বে বাঁধবন্দী করে ধান ও মৎস্য চাষকরতঃ ভোগদখলে আছেন। এমনকি ভবিষ্যতে ওই জমি খাল/নদী রুপান্তরিত হওয়ার সম্ভবনা নেই বলে উল্লেখ করেন। এর পরে ২০১৬ সালে ৩ মে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মুহাম্মদ নাজমুল হক ও ২০১৮ সালে ৫ মে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. এনামূল কবির একই প্রতিবেদন দেন। শুধু তাই নয় উপজেলা কৃষি খাস জমি ব্যবস্থপনা ও বন্দোবস্ত কমিটি কর্তৃক যাচাই বাচাইঅন্তে ভূমিহীন হিসাবে বিবেচিত হন কৃষক রহিম মালী। জেলা কৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সভায় অনুমোদন করা হয়। কৃষক রহিম মালী এফএনএসকে বলেন, জমিতে ধান ও মাছ চাষ করে আসছিলাম। গত বছর প্রথমে ভূমিদস্যুরা আমার ঘেরের প্রায় ৫লক্ষ টাকা মাছসহ জমি দখল করে নেয়। সাবেক ইউপি সদস্য প্রভাবশালী মো. মান্নান গাজী সরকারী খাস জমি দখল করে অবৈধ ইট ভাঁটা পরিচালনা করছেন। ভূমিদস্যু মকর ও আনিস শুধু কৃষককে ভূমিহীন করে ছাড়েনি। এক ভিক্ষুকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার মুজিববর্ষের রেষ্টিকৃত দলিলের ঘরসহ গুচ্ছ গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মোট ২টি ঘর জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। ঐ গৃহহীন ও ভূমিহীন ভিক্ষুক মুজিববর্ষের প্রথমে কবুলিয়ত দলিল পেলেও আজও ঘরে উঠতে পারেনি। চাঁদখালী ইউনিয়নের গড়েরডাঙ্গা মুজিববর্ষের ৫টি ঘর। ৫নং ঘরের বাসিন্দা জিএম শাহীনুর হাসান এফএনএসকে বলেন, আনিস জোরপূর্বক প্রথম ঘরটি দখল করে আছে। ঘরটি ভূমি-গৃহহীন ভিক্ষুক মো. আবুতালেব সানাকে সরকার দলিল করে দিয়েছে। সে কাউকে পাত্তা দেয় না। অথচ তার পাকা বাড়িসহ বিলান জমি আছে। সাবেক ইউপি সদস্য মো. মান্নান গাজী খাস জমি দখল পূর্বক ইট ভাঁটা পরিচালনায় প্রশ্নে উল্ট এফএনএসকে বলেন, সরকার আমার জায়গা দখল করেছে। ভূমিদস্যু মোখলেস গাজী এফএনএসকে বলেন, আমি কারো জমি দখল করেনি। আমার জমির কাগজ আছে। তবে সাংবাদিকরা জমির কাগজ দেখতে চাইলে ২ সপ্তাহ সময় নিয়েও কিছুই দেখাতে পারেনি। আনিস গাজী এফএনএসকে বলেন, উপজেলা ইউএনও, চেয়ারম্যান, এমপি ঘরে উঠতে বলছে। দলিল পরে দিবে। তাদের সাথে কথা বলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার ইকবাল মন্টু এফএনএসকে বলেন, সরকার যাকে দলিলসহ ঘর দিয়েছে সেই পাবে। অন্য কাউকে ঘরে উঠতে বলতে পারিনা। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারী খাস জমি দখল করে ভাটার প্রশ্নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম এফএনএসকে বলেন, আগামী রোববার এসিল্যান্ড সাহেব যাবে, আমরাও দেখি কে কেমন কত দখল করতে পারে। ঘর দখল বিষয় বলেন, আনিস মিথ্যা বলছে চেয়ারম্যান নাকি উঠতে বলছে, এটা অসম্ভব। কানুনগো যাবে।