রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে আওয়ামী লীগ নেতাকে বক্তব্য দিতে নিষেধ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুইদিন ধরে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্ততঃ ১৫ জন আহত, ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে দুই গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী সহ চার যুবলীগ নেতাকে আটক করেছে পুঠিয়া থানা পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন বানেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
নামাজগ্রামের আবুল কালাম আজাদ ওরফে ডিস কালামের পুত্র যুবলীগ নেতা দোয়েল ও জুয়েল রানা, একই গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী রিয়াজুল ইসলাম ওরফে (কসাই রিয়াজ) এবং খুটিপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী ও যুবলীগ নেতা শাহাবুদ্দিন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বানেশ্বর বাজারের দুই গ্রামবাসীর মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফলের লক্ষ্যে জনসভায় নেতাকর্মীদের যাওয়া আসা পরিবহন ও খাবারের ব্যায় সম্পর্কিত বিষয়ে বানেশ্বর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির চেম্বারে গত ২৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাত ৮ টার দিকে বাজার ব্যবসায়ীরা আলোচনা বসে।
বানেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নামাজ গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ ওরফে (ডিস কালাম) বক্তব্য শুরু করতেই একই ইউনিয়নের খুটিপাড়া গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী ব্যবসায়ী হাবিব তাকে বক্তব্য দিতে নিষেধ করেন। এতে উভয়ের মধ্যে বাকতিতম্বার একপর্যায়ে ব্যবসায়ী সমিতির চেম্বারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা পন্ড হয়ে যায়।
এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে দিতে বাধা দেওয়ার আওয়ামী লীগ কর্মী হাবিব বানেশ্বর বাজারের পূবালী ও ইউসিবি ব্যাংকের সামনে অবস্থান করছে জানতে পেয়ে বানেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নামাজ গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ ওরফে (ডিস কালাম) এর নেতৃত্বে নামাজ গ্রাম থেকে লাঠিসোটা নিয়ে কিছু লোক নিয়ে পূবালী ও ইউসিবি ব্যাংকের সামনে খুটিপাড়া গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী হাবিবকে দেখতে পেয়ে ধাওয়া করলে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নিয়ে থাকা খুটিপাড়া গ্রামের বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মুহূর্তের মধ্যেই একত্র হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ ওরফে (ডিস কালাম) এর লোকজনকে মারধর করে।
মারপিটে আওয়ামী লীগ নেতা ডিস কালাম পক্ষে করতে আসা নামাজগ্রামের ৫/৭ জন আহত হয়। ওই সময়ই্ পুঠিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছামাত্রই উভয় পক্ষের লোকজন পালিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নামাজ গ্রামের এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ ওরফে (ডিস কালাম) নামাজ গ্রামের নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী সহ সাধারণ লোকজন নিয়ে শেষরাত পর্যন্ত খুটিপাড়ার লোকজনের ওপর হামলার কৌশল ও পরিকল্পনা তৈরী করে।
এরপর পরদিন ২৫ জানুয়ারী বুধবার সকাল ১০ টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ ওরফে (ডিস কালাম) নামাজ গ্রাম থেকে ৫০/৬০ নেতাকর্মী সমর্থকদের নিয়ে দেশীয় অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বানেশ্বর ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেয়।
খুটিপাড়া গ্রামে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগ সহ গ্রামের প্রায় শতাধিক লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেওয়া ডিস কালামের লোকজনের উপর হামলা করার উদ্দেশ্যে বানেশ্বর ডিগ্রী কলেজ মাঠের ভিতর দিয়ে ট্রাফিক মোড়ের দিকে এগোতে থাকে এই খবরে নামাজ গ্রামের ডিস কালামের লোকজন সংঘর্ষের উ˜েদ্যশ্যে কলেজ মাঠে প্রবেশ করতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুঠিয়া থানা হতে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পপরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দুই পক্ষকেই ধাওয়া করে লাঠিচার্জ করলে উভয় পক্ষের লোকজন ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কালে পুঠিয়া থানা পুলিশ উভয় পক্ষের যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ৪জন নেতাকর্মীকে আটক করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এই ঘটনায় বানেশ্বর বাজারের দুই গ্রামবাসীর মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
এ ঘটনায় পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মো. সোহরাওয়ার্দী হোসেন জানান, দুইদিন ধরে বানেশ্বরের খুটিপাড়া ও নামাজগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের আটক করা হয়েছে। ঘটনায় উভয় পক্ষের সংঘর্ষ এড়াতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বানেশ্বর বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি বলেও জানান পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মো. সোহরাওয়ার্দী হোসেন।