বরিশালের বাবুগঞ্জে গভীর রাতে নিজ ঘরে রহস্যজনক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন একই পরিবারের দুই নারী। এ সময় অচেতন অবস্থায় আরেক নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন প্রয়াত ইউপি সদস্য মো.দেলোয়ার হোসেন খন্দকারের বাড়িতে এ ঘটনাটি ঘটেছে।নিহত দুই নারী হলেন দক্ষিণ ভূতেরদিয়া গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের স্ত্রী লালমুন্নেছা বেগম (৯৫) এবং সোলায়মান হোসেনের স্ত্রী রিপা আক্তার (২৩)। নিহতরা সম্পর্কে দেলোয়ার মেম্বারের মা এবং পুত্রবধূ। এ সময় দেলোয়ার মেম্বারের স্ত্রী মিনারা বেগমকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতের প্রতিবেশী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মরিয়ম বেগম জানান, বুধবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে প্রতিবেশি দেলোয়ার মেম্বারের ঘরের সামনে অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন তিনি। এ সময় সন্দেহ হলে তিনি বাড়ির লোকজন ডেকে দেলোয়ার মেম্বারের ঘরে গিয়ে দেখতে পান ঘরের সিঁধ কাঁটা ও দরজা খোলা এবং ঘরে থাকা ৩ নারীই অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে রয়েছেন। এ সময় বাড়ির লোকজন তাদের ৩ জনকেই উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক লালমুনন্নেছা বেগম এবং রিপা আক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরজন মিনারা বেগম হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মিনারা বেগমের জ্ঞান না ফেরায় রহস্যের জট খুলছে না। একই বাড়ির বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, আমি বাড়িতে ছিলাম না। আমার মা রাতে অপরিচিত এক লোককে ওই বাড়ির সামনে ঘোরাফেরা করতে দেখেন। কেন বা কীভাবে হয়েছে এটা এখনই বলা মুশকিল তবে এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে মনে হচ্ছে। বাবুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, হত্যাকান্ডের মোটিভ এখনো স্পষ্ট নয়। ঘরে যে সিঁধ কাটা হয়েছে সেখান থেকে কোনো বাচ্চা ঢোকাও অসম্ভব। মৃতদেহের শরীরেও বাহ্যিকভাবে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড যা চুরি-ডাকাতি বলে চালানোর জন্য ঘরে ওই সিঁধ কাটা হয়েছিল। নিহতদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত নারীর জবানবন্দি পেলেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।'বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বাকেরগঞ্জ সার্কেল) ফরহাদ সরদার প্রেস ব্রিফিং এ বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। তবে শ্বাসরোধ করে, না চেতনা নাশক দ্রব্য দিয়ে করে হত্যা করা হয়েছে সেটা নিশ্চিত নই। দ্রুত সময়ের মধ্যে রহস্য উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ফরহাদ সরদার। নিহত রিপা আক্তারের মা ইয়াসমীন বেগম জানান,তাঁর মেয়ের সাথে স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিল,তারা আমার মেয়েকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছেন। এবং এঘটনা আমার মেয়ের দাদী শাশুড়ীকে হত্যার কারন, তিনি আমার মেয়েকে হত্যার ঘটনা দেখে ফেলায় তাকেও হত্যা করেছেন বলে আমার ধারনা আমি আমারর মেয়ের হত্যাকারী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।
অপরদিকে নিহতে রিপা আক্তারের চাচা নূর হোসেন বলেন, সিঁধ কেটে চুরি পরবর্তী হত্যাকান্ড এটি নাটকীয় বিষয় কারণ যেখান সেখান থেকে একটা লোক আসা-যাওয়া করা মতো না আলামত নাই। ভিতরে ও বাইরে মাকড়ার জাল রয়েছে। একটা লোক আসা-যাওয়া করলে জাল থাকতো না। পরিকল্পিতভাবে দুর্ঘটনা ঘটাইছে। এটি আমার মেয়ের জামাই সোলায়মানের পক্ষ থেকে ঘটনানো হয়েছে।
এদিকে এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে নিহত রিপা আক্তারের স্বামী সোলায়মানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়েছেন। নিহতদের মহরেদ এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ঘটনাস্থল তাৎক্ষনিক পরিদর্শন করেন বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার ওয়াহেদুল ইসলাম(বিপিএম)অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসাইন,বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মৃধা মুহাম্মদ আক্তার উজ জামান মিলন,কেদারপুর ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।