গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ১০ দফা দাবি আদায়ে আগামী সপ্তাহে রাজধানীর চার স্থানে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ৩০ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত এবং ১ ফেব্রুয়ারি মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। মহানগর উত্তর বিএনপি ২৮ জানুয়ারি শাহজাদপুর থেকে আবুল হোটেল পর্যন্ত এবং ৩১ জানুয়ারি গাবতলী থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন কবে। এদিকে বিএনপিকে নিয়ে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভির প্রতি আহ্বান জানান দলটির মহাসচিব। সাংবাদিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি মিডিয়া সংক্রান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেনসিটিভ একটি বিষয় তুলে ধরতে চাই। আপনারা কিছু মনে করবেন না। একটি পার্টিকুলার চ্যানেলের নাম বলতে বাধ্য হচ্ছি। যদিও নাম বলা উচিত ছিল না তারপরও বলছি। তিনি বলেন, সময় চ্যানেল গতকাল (গত বুধবার) একটি ফিচার করেছে। আমি মনে করি এটি সুস্থ সাংবাদিকতা নয়। নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার শামিল নয়। বর্তমানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন চলছে, সেটি এর পেছনে প্রায় ছুরিকাঘাত করার মতো, পুরোপুরিভাবে একটি পক্ষ অবলম্বন করা। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সময় একটি মেইনস্ট্রিম চ্যানেল। এদেশের মানুষ একে পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করে, আস্থা রাখে। সেই ক্ষেত্রে...। অন্যান্য চ্যানেল বা পত্রিকাগুলো নিঃসন্দেহে জনগণের কথাগুলো তুলে ধরছে। গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছে। তিনি বলেন, সময় টিভির এই ধরনের ডকুমেন্টারি প্রচার করা আমি মনে করি নিঃসন্দেহে অনভিপ্রেত। অশালীন বলব না, একেবারেই মিথ্যা প্রচার। আমি আশা করব, সময় চ্যানেল এটি সম্পূর্ণ বন্ধ করবে। একটি দলের প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রচার না হয়, সেদিকে তারা খেয়াল রাখবে। মির্জা ফখরুল বলেন, একটি কথা সবসময় আমাদের সবার মনে রাখা উচিত। আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছি। এখানে কোনো ব্যক্তি, কোনো দল বা সংগঠনের জন্য আন্দোলন করছি না। তাদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য আন্দোলন করছি না। তিনি বলেন, আমরা জনগণের ভোটের অধিকার ফেরত পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছি। তাদের কথা বলার অধিকার ফেরত পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছি। সেই ক্ষেত্রে এই ধরনের বিদ্বেষমূলক প্রচারণা শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদী শক্তিকেই শক্তিশালী করবে। আশা করব আপনারা এ ধরনের প্রচার থেকে বিরত থাকবেন এবং একটি সুস্থ অবস্থায় যেন গণমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করতে পারি, সেই রকম পরিবেশ তৈরি করবেন। এদিকে বৃহস্পতিবার ৭৬-এ পা রাখেন মির্জা ফখরুল। ১৯৪৮ সালের এদিনে ঠাকুরগাঁওয়ে জন্মগ্রহন করেন তিনি। নয়া পল্টনে আসার পর দলের নেতাকর্মীরা শুভেচ্ছা জানান। জন্মদিনের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর আগেই বারণ করে দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালযে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সাংবাদিকরা তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালে মির্জা ফখরুল বলেন, ধন্যবাদ আমাকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য যে, আমার সময় প্রায় শেষের দিকে। এ সময় পাশে বসা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, একটা ছোট্ট গোলাপ দিলে ভালো হতো। মির্জা ফখরুল বলেন, না, না- প্লিজ এটা করবেন না। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ওয়ান হান্ড্রেড দুই নট আউট। দেখছেন ছবিটা। এই ছবিটা সকলকে দেখতে বলব। ইটস এ ওয়ান্ডারফুল মাস্টার পিস পিকচার। আমাদের মতো মানুষদের এই জীবনকে পজেটিভলি নেওয়া -এটা এত চমৎকারভাবে এই ছবিতে উঠে এেেস্ছ। অনেকে আছেন না বৃদ্ধ হয়ে যায়, মরার আগে মরে যান্। তো ওটাকে নেগেট করে ১০২ বছরের বৃদ্ধ সে জীবনকে উপভোগ করেতেছে এটা দেখার মতো। সকলেরই এই ছবি দেখা উচিত। বিএনপি মহাসচিব বলেন, জন্মদিন মানে আরও একটি বছর চলে গেল। বৃদ্ধ থেকে বৃদ্ধের পথে যাচ্ছি। সকালে দুই মেয়ের টেলিফোনে ঘুম ভেঙেছে আমার। দুই মেয়ে আর আপনাদের ভাবীর (সহধর্মিনী রাহাত আরা বেগম) শুভেচ্ছায় দিন শুরু করেছি। আমার বড় মেয়েই প্রথম ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ বলল। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পা রাখলাম ৭৬ এ। আমার কাছে এখনকার জন্মদিন নিদারুণ কষ্টের। কারণ আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কারাবন্দি, এখন গৃহে অন্তরীণ হয়ে আছেন। নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণায় দিনযাপন করছেন। এরকম একটা অবস্থায় জন্মদিন নিয়ে কি বলার আছে? স্ত্রী রাহাত আরা বেগমকে নিয়ে উত্তরার ভাড়া বাসায় থাকেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। সকালে তার সহধর্মিনী ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ জানিয়েছেন। একসঙ্গে তারা সকালে ব্রেকফাস্ট করেছেন, চা খেয়েছেন। পরে বাসা থেকে নিজের প্রাইভেটকারে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন বিএনপি মহাসচিব। পথে অনেক নেতারা টেলিফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলে জানান। এ ছাড়া ফোনে প্রবাসী মেয়ে শামারুহ মির্জার কাছ থেকে শুভকামনা পেয়ে তার জন্মদিন শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি। বড় মেয়ে শামারুহ মির্জা স্বামী-সন্তান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় আছেন। সিডনির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক্টরাল ফেলো হিসেবে কাজ করছেন তিনি। ছোট মেয়ে সাফারুহ মির্জা ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা করেন। মির্জা ফখরুলের বাবা প্রয়াত মির্জা রুহুল আমিন মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন, মন্ত্রীও ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ফখরুল ছাত্র জীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন তিনি। ঢাকা কলেজসহ কয়েকটি সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন ফখরুল। সরকারি চাকরি ছেড়ে আশির দশকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।