জামালপুরের মেলান্দহে বহুল আলোচিত চরবানিপাকুরিয়া ইউনিয়নের সহকারি ভূমি কর্মকর্তা ছানাউল ইসলামের ঘুষ-দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতা-অনিয়ম এবং সাংবাদিকদের লাঞ্চিতের ঘটনা তদন্ত করবে আজ (২৯ জানুয়ারি) রোববার। সহকারি কমিশনার (ভূমি) জোহরা সুলতানা জুথির স্বাক্ষরিত এক পত্র জারি করেছেন।
অভিযোগ ওঠেছে, সহকারি ভূমি অফিসটি একদম নির্জন গ্রামে হবার কারণে সাধারন মানুষকে জিম্মি করে দরজা বন্ধ রেখে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে আসছিলেন ওই কর্মকর্তা। তার অফিসের পিয়ন এবং নিজস্ব কিছু দালাল নিয়োগ করেছেন ঘুষ আদায়ের জন্য। জমি সংক্রান্ত যে কোন কাজের জন্য সাধারণ কিষাণ-কিষাণীরা ভূমি অফিসে গেলে পিয়ন কিংবা দালালের মাধ্যমে ওই ভূমি কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করতে হয়। ঘুষের বিষয়ে কথা পাকাপোক্ত হলেই ভূমি কর্মকর্তার দপ্তরে প্রবেশের অনুমোতি মেলে সেবাগ্রহিতাদের। তার কার্যালয়ে প্রবেশের সাথেই ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। ঘুষের পরিমানের কথায় একমত হলেই তিনি জমির কাজ সম্পন্ন করে দেন। জমির খারিজের কাজে ঘুষের পাশাপাশি জমির খাজনা প্রদানের জন্যও অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় কৃষকদের। এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৫ জানুয়ারি ভোরের কাগজের সাংবাদিক নাহিদ হাসান নয়ন, আজকের পত্রিকার সাংবাদিক রকিবুল ইসলাম নয়নসহ কয়েকজন সাংবাদিক অভিযুক্ত সহকারি ভূমি কর্মকর্তা ছানাউল ইসলামের মতামত জানতে যান। ওই কর্মকর্তা সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তাদেরকে লাঞ্চিত করেন। ওই দিন ভূক্তভোগি সাংবাদিকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সেলিম মিঞার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ইউএনও অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসিল্যান্ড জোহরা সুলতানা জুথিকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। পরদিন বিক্ষুব্দ এলাকাবাসী মহিরামকুল মোড়ে মানবন্ধন করেন।
ভূক্তভোগি মহিরামকুল গ্রামের মুক্তা বেগম (৪০) জানান-৫ শতাংশ জমির খারিজ করতে আমার কাছ থেকে ভূমি কর্মকর্তা ছানাউল ইসলাম ৬ হাজার টাকা নিয়ে ভুল খারিজ প্রদান করেছেন। সংশোধনের নামে তিনি আরো ৪ হাজার টাকা নিয়েও খারিজ সম্পন্ন করে দেননি। ভূক্তভোগি মুক্তা বেগম উপজেলা ভূমি অফিসে বারবার ধর্না দিয়ে খারিজ সংশোধনি করে নেন। এ বিষয়ে মুক্তা বেগম ভূমি কর্মকর্তা ছানাউল ইসলামের সাথে কথা বলতে গেলে তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন। চরবানিপাকুরিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ইসহাক আলী জানান-এই কর্মকর্তার ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়ে প্রশাসনকে আমি নিজেও অবহিত করেছি। এমন অসংখ্য অভিযোগ ওই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তবে অভিযুক্ত ভূমি কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয় বলে জানিয়েছেন।
ওদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে ভূমি কর্মকর্তার নিজ কার্যালয়ে বসে সাংবাদিকদের নামে একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেছে। তাতে এক সাংবাদিকের নামে চাঁদাবাজির কথা বলা হয়। ভিডিওতে যে সাংবাদিকের নাম বলা হয়েছে ঘটনাস্থলে ওই সাংবাদিক ছিলেন না। এমনকি ওই সাংবাদিক ঘটনার এক সপ্তাহ আগে থেকেই তার মা এবং ভাতিজাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন। অভিযুক্ত ভূমি কর্মকর্তা নিজেকে আত্মরক্ষার জন্য আরেক নিরিহ সাংবাদিকের নামে মিথ্যা অপবাদের বিষয়টি ইউএনও সেলিম মিয়াকে জানানো হয়েছে। অপরদিকে লাঞ্চিত সাংবাদিকদেরও নানাভাবে প্রলোভনের ফাঁদপেতে নানাভাবে বিব্রত করে আসছে। ইউএনও বলেছেন, এ বিষয়টিও তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে। সাংবাদিক লাঞ্চিত এবং মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর পায়তারার বিষয়ে গত শুক্রবার রাতে মেলান্দহ সাংবাদিকরা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ওই ভূমি কর্মকর্তার মিথ্যা অপপ্রচার এবং সাংবাদিক লাঞ্চিতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ এবং নিন্দা জানিয়ে শাস্তির দাবি করা হয়।
আজ রোববার অভিযুক্ত সহকারি ভূমি কর্মকর্তা ছানাউল ইসলামের সাথে সাংবাদিক লাঞ্চিতর বিষয়ে তদন্ত করবেন। ইতোমধ্যেই তদন্তের স্বার্থে ভূক্তভোগি এবং ভূমি কর্মকর্তাকে পৃথক পত্রও দিয়েছেন।