মাত্র কয়েকদিন আগে রাতে দিনে সমানতালে ছিল হাড় কাঁপানো শীত। কিন্তু গত সপ্তাহে বেড়ে গেছে তাপমাত্রা। এখন দিনের বেলায় অনুভূত হচ্ছে বেশ গরম। আবার রাতের অংশে কখনো শীত, কখনো গরম। প্রকৃতির এমন আবহাওয়ায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে চেপে বসেছে রোটা ভাইরাসজনিত জ্বর, ডায়রিয়াসহ নানা রকম অসুস্থতা। বাড়ি বাড়ি বিভিন্ন বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তবে আক্রান্তরা অধিকাংশই শিশু। তাদের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠিকমতো মিলছে না স্যালাইন। এতে রোগীর অভিভাবকেরা পড়ছেন ভোগান্তিতে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিগত কয়েকদিনে ডায়রিয়া রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। স্যালাইনের সাপ্লাইও শেষের দিকে।
সরেজমিন সন্ধ্যায় হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, ২ বছর বয়সের মৌ, ১১ মাসের রাফা, ১ বছরের বর্ষণ, ২ বছরের হুজাইফা হাসপাতালে ভর্তি। তারা সবাই হঠাৎ করেই রোটা ভাইরাসজনিত ডাইরিয়ায় আক্রান্ত। শুধু তারাই না তাদের মতো বিভিন্ন বয়সী অনেকে একই সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৭২ ঘণ্টায় শিশুসহ প্রায় শতাধিক বিভিন্ন বয়সী মানুষ হাসপাতালে এসেছে। তাদের মধ্যে অনেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরলেও ভর্তিরতদের সংখ্যা কম নয়।
হাসপাতালটির রেকর্ড বইসূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখে ২২ জন, ২১ তারিখে ১৯ জন, ২২ তারিখে ২৯ জন, ২৩ তারিখে ২৭ জন, ২৪ তারিখে ১৮ জন, ২৫ তারিখে ১৬ জন, ২৬ তারিখে ২৪ জন মিলে এক সপ্তাহে দুই শতাধিক রোগী ডায়রিয়া, জ্বর, ঠান্ডা, বমিসহ রোটা ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসে। তাদের মধ্যে অনেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরা হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীর অভিভাবকদের অভিযোগ, ডায়রিয়া রোগীদের জন্য স্যালাইন প্রয়োজন হলেও হাসপাতাল থেকে তা মিলছে না। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে কিনেই তাদের রোগীদের চিকিৎসা করাচ্ছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালে হঠাৎ করেই রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া রোগী বেড়ে গেছে। এদিকে স্যালাইনের সাপ্লাইও শেষের দিকে। তাই এমনটি হচ্ছে। দ্রুত স্যালাইন পেতে তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।
কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি নিশ্চিন্তপুর গ্রামের ১ বছরের শিশু বর্ষণ সাহার মা দোলন সাহা জানান, শিশু বর্ষণ হঠাৎ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। ৩ দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। কিন্তু এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। উপজেলার কমলাপুর গ্রামের সোহেল রানা জানান, তার ছেলে তাসকিনের বয়স দেড় বছর। তার শরীরে প্রথমে জ্বর আসে। পরে রাতে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। পরদিন সকালে শিশুটি দুর্বল হয়ে হয়ে নিস্তেজ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছি। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি থেকেও প্রথম দিন ১টি স্যালাইন হাসপাতাল থেকে দিয়েছিল। পরে বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেন জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে কোন কোন সময় কিছু রোগব্যাধির প্রাদুভার্ব দেখা দেয়। যেমন হাড়কাপানো শীত আসলে শিশুরা নিউমোনিয়া, ঠান্ডা, কাশি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আবার কয়েকদিন পর তা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে।
এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা স্যালাইন সংকটের বিষয়ে বলেন, হাসপাতালে স্যালাইনের সাপ্লাই শেষের দিকে। রোগীরা হাসপাতাল থেকে পাঁচ্ছে না এটা সঠিক নয়। তবে কম আছে। সেগুলো অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুতর রোগীদের দেয়া হচ্ছে। স্যালাইনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। আশা করছেন দু-এক দিনের মধ্যে এসে যাবে। রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুরা কয়েক দিনের চিকিৎসায় সুস্থও হয়ে উঠে। যে কারণে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।