নির্ধারিত সময় শেষে আরও দুই দফা মেয়াদ বাড়ালেও বড়াইগ্রামের জোনাইল-রাজাপুর হাট সড়ক সংস্কার কাজ শেষ হয়নি। কাজের এ কচ্ছপগতির কারণে রাস্তার ধূলাবালুর উড়াউড়িতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন তিনটি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। যানবাহন চলাচলে উড়া ধূলায় এ এলাকার বসতবাড়ি ও দোকানপাটে মানুষজনের থাকাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। একই সাথে বাড়ির এবং রাস্তার পাশের দোকানের পণ্য সামগ্রীতে ধূলার আস্তরন পড়ে সেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এতে সাধারণ লোকজনের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এলজিইডি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস এমপি উপজেলার জোনাইল বাজার থেকে রাজাপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও বর্ধিত করণ কাজের উদ্বোধন করেন। ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শহীদ ব্রাদার্স ২০ কোটি ৫২ লাখ টাকা চুক্তিমূল্যে কাজটি পেয়েছেন। তার প্রতিনিধি হিসেবে শরিফুল ইসলাম রমজান কাজটি করছেন। তিনি কাজের শুরুতেই ভাঙাচোরা রাস্তার পুরনো কার্পেটিং উঠিয়ে নতুন করে ইটের খোয়া বিছিয়ে দেন। কিন্তু এরপর কার্পেটিং না করায় প্রতিনিয়ত যান চলাচলে এখন রাস্তার খোয়া ভেঙ্গে যাওয়াসহ অনেক খোয়া সরে গেছে। যানবাহনের চাকার চাপে খোয়া ছুটে গিয়ে প্রায়ই পথচারীরা আহত হচ্ছেন। যেকোন প্রকার যানবাহন চলাচলে বা সামান্য বাতাসে সারাদিন প্রচুর ধূলা উড়ে। এতে এ পথে চলাচলকারী যাত্রী, সড়কের পাশের ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট ধুলাময় হয়ে পড়ছে। একই সাথে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন পথচারীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। সুত্র জানায়, গত ১২ এপ্রিল সংস্কার কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর আরো দুই দফা সময় বাড়ালেও কাজে কোন অগ্রগতি হয়নি।
চান্দাই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ওয়ার্ড সদস্য রুস্তম আলী বলেন, এই সড়কের ধারে আমাদের গাড়ফা বাজারসহ দিয়ারগাড়ফা, দাসগ্রাম, চান্দাই ও রাজাপুর বাজার রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রয়েছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুশি হলেও প্রায় আড়াই বছরে কাজ শেষ না হওয়ায় এটি এখন আমাদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
স্কুল শিক্ষক হায়দার আলী জানান, এ রাস্তার পাশে দুটি কলেজ ও একটি সিনিয়র মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। গাড়ি চলার সময় রাস্তার ধূলাবালি উড়ে এসে ক্লাশে বসে থাকা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গায়ে পড়ে। এতে আমরা খুবই ভোগান্তিতে আছি।
জোনাইল দিঘইর মোড়ের ব্যবসায়ী আবদুল মজিদ কাজী বলেন, রাস্তার উড়ে আসা ধুলার কারণে দোকানে টেকাই দায় হয়ে পড়েছে। কখনও কখনও বাধ্য হয়ে দোকান বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এভাবে আর কতদিন চলা যায়। একই এলাকার গৃহিণী রাবেয়া আক্তার বলেন, বালি-খোয়ায় ঢাকা রাস্তায় গাড়ি চলাচলে প্রচন্ড ধুলা উড়ে। বাড়ির কোন মালামাল ধূলামুক্ত রাখতে পারছি না। এমনকি রান্না করা খাবার খেলেও দাঁতে বালি কিসকিস করে।
দাসগ্রাম এলাকার সাইদুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য রাস্তায় কার্পেটিং করতে দেরি হলে সড়কে নিয়মিত পানি ছিটাতে দেখেছি। কিন্তু এ রাস্তায় পানিও দেয়া হয় না। এতে দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, কারোনা মহামারি ও নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজ শেষ করতে একটু সময় লাগছে। তবে অল্প দিনের মধ্যেই কার্পেটিং শুরু করার ইচ্ছে আছে।
কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন বলেন, চুক্তি মোতাবেক কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ছয় মাস করে দুই বার সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারপরও কাজ শেষ হয়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ শেষ করতে মৌখিক ও লিখিতভাবে কয়েক দফা তাগাদা দেয়া হয়েছে।
এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি নিজেও রাস্তাটি পরিদর্শন করেছি। ঠিকাদারের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাকে দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেছি।