সুন্দরবন উপকূলীয় খুলনার পাইকগাছায় যুবসমাজ ঝুঁকে পড়েছে অনলাইন জুয়ায়। আর যুবসমাজ ধ্বংস হচ্ছে। স্কুল-কলেজের ছাত্র থেকে শুরু করে ভ্যান চালক পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার যুবকরা কাজ-কর্ম ফেলে ডুবে আছে জুয়ায়। ভুলতে বসেছে পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি কথাটি। এখন কাজ নয়, বরং অল্প সময়ে সাবলম্বী হওয়ার দিবাস্বপ্নে খানিকটা যেন বুদ হয়ে পড়েছে তারা। এ ক্ষেত্রে শুধু টাকা হলেই চলবে। যদিও হাতে গোনা দু’একজন ছাড়া অধিকাংশরাই সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। করোনাকালে পর্যাপ্ত সময় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনলাইনভিত্তিক ক্লাস করতে শিক্ষার্থীদের হাতে কিছুটা হলেও বাধ্যতামূলক পৌঁছে যায় স্মার্ট ফোন। আর এ সুযোগে পড়া-লেখার পাশাপাশি তারা ঢুকে পড়ে অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন জুয়ার আসরে। যেখানে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও অলিক স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েছে তারা। বিশেষ করে বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে চলমান বিভিন্ন ক্রীড়া আসরে দলের পক্ষে-বিপক্ষে এমনকি ক্রিকেটে প্রতি বল, ওভার, প্রিয় খেলোয়াড়ের পারফরমেন্স’র উপরও ধরা হয় জুয়া (বাজি) এ ক্ষেত্রে অধিকাংশরাই হারলেও লাভবান হওয়ারও থাকে সুযোগ। খেলায় মেতে অনেকে ধরাশায়ী হয়েছে। আবার কেউ কেউ লাভবানও হয়েছে। যদিও সে সংখ্যা হাতে গোনা। সংশ্লিষ্টরা জানায়, একই দোকানে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে অবস্থানরতদের অগোচরে জুয়া চলছে যা পাশের সিটে বসা লোকটি পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারেন না। সূত্র জানায়, অনলাইন জুয়া পরিচালকেরা এলাকাভিত্তিক ইলেকট্রনিকস মানি সাপ্লাইয়ার এজেন্ট দিয়েছে, উপজেলায় এর সংখ্যাও নেহাত কম নয় দাবি খেলোয়াড়দের। এসব খেলার নামে জুয়ার আসরে ইতোমধ্যে অনেকের সহায়-সম্বল হারানোর ঘটনাও ঘটেছে। যার মধ্যে ব্যাংক কর্ম কর্তারাও রয়েছেন। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির অবাধ অগ্রগতির যুগে সেই অনলাইনকেই ভর করে নিঃস্ব হচ্ছে এসব যুবারা। সূত্র জানায় আইসিসির টি-২০ ওয়ার্ল্ড কাপ, ইউরোপীয় ফুটবল লিগ, ক্রিকেট লিগসহ বিভিন্ন ধরনের খেলায় বাজি ধরার ব্যবস্থা আছে। চাইলে যে কেউ ক্যাসিনোও খেলতে পারেন। ওয়েবসাইটের পাশাপাশি তাদের মুঠোফোন অ্যাপও রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, এটি কোনো স্বাভাবিক অনলাইন জুয়ার আসর। কিন্তু গভীরে প্রবেশ করলে বুঝতে পারা যায়, জুয়ার নামে এটিও বিদেশে টাকা পাচারের আরেক আসর। দেশে ও দেশের বাইরে হুন্ডি ব্যবসার প্রচলন পরিলক্ষিত হলেও অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পাচার হচ্ছে টাকা। কেননা, অনলাইনভিত্তিক এসব ব্যবসা পরিচালনায় মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। সূত্র জানায়, প্রতিটি ওয়েবসাইট-ই এক বা একাধিক অ্যাডমিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তারাই মূলত জুয়ার এসব আসরের নিয়মিত শরিক। অনলাইনভিত্তিক এসব আসর বন্ধে কার্যত কোন প্রকার প্রশাসনিক তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। নীরিক্ষণ বা নজরদারী বাঁড়াতে সচেতন অভিভাবক মহল সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এসব অনলাই জুয়া বন্ধে সচেতন অভিভাবকমহল সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী দাবি জানিয়েছেন। আর তা না হলে যুবসমাজের অধিকাংশ জুয়ার নেশায় বুদ হয়ে টাকা জোগাড় করতে নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়তে পারে।