২০৪১ সাল সামনে রেখে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার। দেড় যুগ আগে ডিজিটাল বাংলাদেশের সূচনা হলেও তা ছিলো কাল্পনিক। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা এখন দৃশ্যমান। এই ডিজিটাল বাংলাদেশই বদলে দিয়েছে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির গতিপথ। এই স্মার্ট বাংলাদেশ সহজ করবে মানুষের জীবন যাত্রা, হাতের মুঠোয় থাকবে সব কিছু। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই আসবে সেই রূপকথার মতো দেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা এই শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত, কেননা উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তো এরিমধ্যে স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হয়েছে, এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশও স্মার্ট দেশে রূপান্তরের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে, তাই দেশের উন্নতি এবং অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে দেশকে অনেকটাই উন্নত বিশ্বের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে যেসব দেশ প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকবে তারাই ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে।
বিগত করোনা মহামারির বিস্তর ক্ষয়-ক্ষতি বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশের চেয়েও সুন্দরভাবে সামাল দিতে পেরেছে। উন্নত বিশ্ব প্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশ আজ যে পর্যায়ে এসেছে সেই বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী সঠিক সময়েই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন, এখন প্রয়োজন এর কাজ শুরু করে এই উদ্যোগ সফলভাবে এগিয়ে নেওয়া, প্রকৃত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য আগামী দুই দশক মোটেও কোনো দীর্ঘ সময় নয়, কেননা এজন্য প্রয়োজন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছরব্যাপী এক মহাকর্মপরিকল্পনা, প্রযুক্তিনির্ভর সফল ব্যবস্থা, তা সে ডিজিটাল বাংলাদেশ বা স্মার্ট বাংলাদেশই হোক। তবে নির্মাণের পূর্বশর্ত হচ্ছে নির্ভুল ডাটাবেইস, এ কাজটিই সবচেয়ে কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। দেড় যুগ আগে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত সেভাবে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠতে রয়েছে সমন্বয়হীনতা। আজ বিশ্বের নামকরা সব ব্যাংক যে আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করছে তার কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে উপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের ব্যাংকগুলোর পিছিয়ে থাকা। ডিজিটাল বাংলাদেশের হাত ধরে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বাংলাদেশকে প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক উন্নত হতে হবে এবং সেই উদ্যোগ সফল করতে হবে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে সৈনিক হিসেবে কাজ করতে হবে।
ইতোমধ্যেই আমরা দেশ ডিজিটাল হওয়ায় নানান সেবা ভোগ করতে পেরেছি, যেমন- দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে- শিক্ষা, অফিস-আদালত, ব্যাংক, সভা-সেমিনার, কনফারেন্স ইত্যাদি অনলাইনভিত্তিক করার পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনাকাটা ঘরে বসেই করতে পারছি। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তিকে ঘিরে করোনা বিষয়ক তথ্যসেবা, টেলিমেডিসিন সেবা, সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তাও প্রদান করাও হয়েছে। প্রযুক্তির এই সহজলভ্যতার কারণে সকল ধরনের বিল ও আর্থিক লেনদেন ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে করা সম্ভব হয়েছে। শুধু শহরেই নয়, বরং জেলা-উপজেলা সদর ছাড়িয়ে গ্রাম, এমনকি প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলেও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে তার পাশাপাশি আমাদের ও উচিত দেশ ও দেশের উন্নয়ন নিয়ে ভাবা। স্মার্ট দেশ গড়ার মাধ্যমে একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলা। সরকার ইতোমধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, আইসিটি অবকাঠামো ও কানেক্টিভিটি, ই-গভর্নমেন্ট এবং ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশনের ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-২ উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিয়েছেন। ২০১৯ সালে সরকার ই-গভর্নমেন্ট মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন এবং ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ সরকারি সেবা অনলাইনে প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা হয়েছে। এর জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে আলাদা তহবিল। এর পাশাপাশি আইডিয়া প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্ট (বিগ), শতবর্ষের শতআশা এবং স্টার্ট-আপ সার্কেল সৃষ্টি করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। বিনিয়োগের জন্য স্টার্ট-আপ বাংলাদেশ লিমিটেড নামে সরকার ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি পরিচালনার নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। সাইবার নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও সার্ক দেশগুলোর মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। সরকার দেশের গ্রামগুলোকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শহর হিসেবে গড়ে তোলার নীতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। যেখানে গ্রামের প্রকৃতি ও পরিবেশ সর্বোপরি চাষাবাদ - ফলমূল-সবজির বাগান-খামারের পাশাপাশি পাওয়া যাবে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকেরও সবিশেষ দায়িত্ব ও করণীয় রয়েছে। প্রথমত, এর জন্য প্রত্যেক নাগরিককে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দ্বিতীয়ত, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি যার যার অবস্থান থেকে দায়বদ্ধ থাকতে হবে- ‘সকলের তরে সকলে আমরা- প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’- এই নীতিবাক্য অবলম্বন করে। তা না হলে স্মার্ট বাংলাদেশের সুফল পাওয়া যাবে না সর্বাংশে ও সর্বতোভাবে। দেশের কল্যাণে তরুণ প্রজন্ম অকাতরে কাজ করে যেতে হবে তাহলেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তরুণ প্রজন্মের চলমান নানা প্রতিবন্ধকতা নিরসনের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ দ্রুত উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। গড়ে উঠবে আমাদের স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ।