গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হাট-বাজার গুলোতে ভেজাল গুড় ও ওজনে কম দেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, গ্রামগঞ্জে বৌ-ঝিয়েরা বাড়িতেই বানিয়ে ফেলেন ভাপা পিঠা, খোলা চিতুই পিঠা, দুধ চিতুই পিঠা, তেলে ভাজা পিঠা, পাটি সাপটা পিঠা, সিদ্ধ কুলি পিঠাসহ হরেক রকম মুখ রোচক পিঠাপুলি। বাড়িতে অতিথি আপ্যায়ন কিংবা পরিবারের সদস্যদের তৃপ্তি মেটাতে গুড়ের তৈরি পিঠা আর ক্ষীরের জুড়ি মেলা ভার। এর প্রধান উপাদানই হচ্ছে গুড়। কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ভেজাল গুড়ে সয়লাভ। গুড় কিনতে গিয়ে কোনটা আসল আর কোনটা নকল তা নিয়েও বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে ক্রেতাদের। উপজেলার পৌর বাজার, শোভাগঞ্জ, পাঁচপীর, ধুবনী, বেলকা, মীরগঞ্জসহ বেশ কিছু হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে সহজ সরল ভোক্তারা কিনছেন ক্ষীর, পিঠা, মোয়া তৈরি কিংবা চিড়া ও মুড়ি দিয়ে খাওয়ার জন্য গুড়। তারা খুঁজছেন আসল আর নকল। গুড় ব্যবসায়ীরা অনেকগুলো গুড়ের মধ্য থেকে গুড়ের মুঠা ভোক্তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে দাম চাইছেন ৯০-১০০ টাকা। আসল গুড় চাইলে অন্য আরেকটি মুঠা দেখিয়ে দিয়ে বলছেন এটার দাম একশ টাকা। ভোক্তারা জানতে চাইলে দোকানিরা বলছেন, ভালো-মন্দ বলে দামেও কম-বেশি হয়। সচরাচর মুঠা হিসাবে গুড় বিক্রি হওয়ায় ওজনও পরখ করে দেখার প্রয়োজনবোধও করেন না ভোক্তারা। ভোক্তাদের এমন সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ঠকিয়ে চলছেন গুড় ব্যবসায়ীরা। তারা নিচ্ছেন প্রতারণার আশ্রয়। দিচ্ছেন ওজনে কম। দোকানিদের ভাষ্য, প্রতিটি গুড়ের মুঠা ষাটের ওজনে বিক্রি হয়। ষাটের ওজন! কেজিতে কতটুকু বলতেই তারা বলছেন, ৭৫০ গ্রাম। ভোক্তার কেনা মুঠা দাঁড়িপাল্লায় ওজন দিয়ে দেখা যাচ্ছে ৫৯৭ গ্রাম। এদিকে ভোক্তা ডিজিটাল পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে বেছে বেছে মুঠা পরিমাপ করতেই বেড়িয়ে এলো ওজন নিয়ে কারসাজির বিষয়টি। দেখা যায়, একেকটি মুঠার ওজন একেক রকম। কোনোটি ৫৭৭ গ্রাম, কোনোটি ৫৯০ গ্রাম, কোনোটি আবার ৫৯৯ গ্রাম। ব্যবসায়ীদের ওজনে এমন কারসাজিতে ভোক্তাদের প্রতিটি মুঠায় ঠকানো হচ্ছে ১০০ থেকে দেড়শ গ্রাম গুড়। যার বাজার মুল্য প্রায় ১৪-২১ টাকা। আবদুর রহমান নামের এক ভোক্তা বলেন, 'আগে গুড়ের তৈরি যে ক্ষীর এবং পিঠা আমরা খেতাম তার স্বাদ ও গন্ধ যেন এখনো লেগেই আছে মুখে। কিন্তু ভেজাল গুড়ের জন্য এখন আর সেই স্বাদও নেই, নেই সেই গন্ধও।'গুড়ে ভেজাল আর ওজনে কমের বিষয়ে জানতে চাইলেই দোকানি দেখিয়ে দিলেন বাজারে উপস্থিত গুড় তৈরিকারক মহাজনকে। ওই মহাজন দিনেশ পাল সটকে পড়লেও কথা হয় মহাজন রেজাউল মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, মীরগঞ্জসহ সুন্দরগঞ্জের বিভিন্ন মুদি ব্যবসায়ী কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রির জন্য ১০০ থেকে দেড়শ গ্রাম কম ওজনের গুড়ের মুঠার চাহিদা দেয়ায় আমরা তাদের চাহিদা মত গুড়ের মুঠা তৈরি করে দেই। এ ছাড়া নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে চিটাগুড়ের সাথে চিনি বা কৃত্রিম চিনি মিশিয়ে তৈরিকৃত ভেজাল গুড় বিভিন্ন বাজার ও রাস্তার মোড়ের বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ- টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) রংপুর অঞ্চলের উর্ধ্বতœন পরীক্ষক মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘গুড়ে কৃত্রিম রং মেশানো স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর।’বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ- টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক মফিজ উদ্দিন আহমাদ বলেন, ‘গুড় ষাটের ওজনে নয় বিক্রি করতে হবে কেজি হিসাবে। ওজনে কারচুপি ও ভেজালের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।