১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিনেই বিশ্বব্যাপী ভালোবাসা দিবস। প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধুবান্ধব, স্বামী-স্ত্রী, মা-সন্তান, ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ মানুষেরা এই দিনে একে অন্যকে তাদের ভালোবাসা জানাচ্ছে। বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে এই দিনটিকে খুব ঘটা করে আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করা হচ্ছে। পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো ভালোবাসার মানুষে পরিপূর্ণ। সারা বিশ্বে একযোগে উদযাপিত হয়েছে ভালবাসা দিবস। এ দিবসটিকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্ব হয়ে উঠেছে উন্মাতাল। অত্যাধুনিক ফ্যাশনের উপহারে ছেয়ে গেছে হাটবাজার। রেস্তোরাঁগুলো সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। সারা দিন চলবে হৈ চৈ, উন্মাদনা। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে প্রিয়জনকে সবাই ফুল ও বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দিচ্ছে। এতে করে বুঝা যায় বর্তমান সময়ে ভ্যালেন্টাইনস দিবসের কদর প্রবলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষেরা এই দিবস উপলক্ষে এই দিনে প্রায় কয়েক কোটি ডলার ব্যয় করে থাকেন। ব্যাপক প্রচার ও আকর্ষণের কারণে বর্তমানে এই দিবসটি একটি প্রধান দিবস হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ইতিহাস অতি প্রাচীন। তবে বিভিন্ন বইয়ে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা উদ্ধৃত হয়েছে। ইতিহাসবিদদের মতে, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এ উৎসবের সূত্রপাত। এক খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে দিনটির নাম ভ্যালেনটাইনস ডেদ করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টান বিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেন্টাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন দফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইনদ। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে পালন করা শুরু করেন। যুদ্ধে আহত মানুষকে সেবার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ভালোবেসে দিনটি বিশেষভাবে পালন করার রীতিতে পরিণত হয় এবং ভ্যালেন্টাইনস ডে সর্বজনীন হয়ে ওঠে আরও পরে প্রায় ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে এ দিনটির বিশেষভাবে গুরুত্ব পাওয়ার পেছনে রয়েছে আরও একটি কারণ। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুর আগে প্রতি বছর রোমানরা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করত দজুনোদ উৎসব। রোমান পুরাণের বিয়ে ও সন্তানের দেবী জুনোর নামানুসারে এর নামকরণ। এ দিন অবিবাহিত তরুণরা কাগজে নাম লিখে লটারির মাধ্যমে তার নাচের সঙ্গীকে বেছে নিত। ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে রোমানরা যখন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীতে পরিণত হয় তখন দজুনোদ উৎসব আর সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের দিনটিকে একই সূত্রে গেঁথে ১৪ ফেব্রুয়ারি দভ্যালেনটাইনস ডেদ হিসেবে উদযাপন শুরু হয়। কালক্রমে এটি সমগ্র ইউরোপ এবং ইউরোপ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীদের মাঝেও ভালোবাসা দিবস পালিত হচ্ছে। ভালোবাসার উৎসবে মুখর আজ রাজধানী। এ উৎসবের ছোঁয়া লাগবে গ্রাম-বাংলার জনজীবনেও। মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেম কথার কিশলয় হয়ে উঠেছে পল্লবিত। অনেকের মতে, আজ এ সময়ে পাখিরা তাদের জুটি খুঁজে বাসা বাঁধবে। নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে ওঠবে। তীব্র সৌরভ ছড়িয়ে ফুল সৌন্দর্য বিভায়। পরিপূর্ণভাবে বিকশিত। প্রিয় মানুষটিকে চকোলেট, পারফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, ই-মেইল, মুঠোফোনের এসএমএস-এমএমএসে প্রেম-বার্তা, হীরার আংটি, প্রিয় পোশাক, জড়াজড়ি করা খেলনা মার্জার অথবা বই ইত্যাদি শৌখিন উপঢৌকন প্রিয়জনকে উপহার দিচ্ছেন ও ভালবাসা দিবসকে ঘিরে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এতে রয়েছে বর্ণাঢ্য র্যালি, সূচনা সঙ্গীত, ভালোবাসার স্মৃতিচারণ, কবিতা আবৃত্তি, গান, ভালোবাসার চিঠি পাঠ এবং ভালোবাসার দাবিনামা উপস্থাপনসহ আরও নানা কর্মসূচি এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কনসার্টেরও আয়োজন করা হয়েছে। মেয়েরা শাড়ি ও ছেলেরা পাঞ্জাবি পড়ে প্রিয় মানুষটির কাছে আঙ্কষনীয় হতে সেজে উঠবে রঙ্গিন সাজে। হতে হতে বা খোপায় দেখা যাবে গোলাপসহ বিভিন্ন রঙ্গের বাহারি ফুল। বিশ্ব ঝুরে ফুল আদান প্রদানের মাধ্যমে বেসে উঠবে এক নতুন চিত্র। ভ্যালেন্টাইনস ডে’র আনন্দে, ভালবাসার রঙ্গে রাঙ্গিয়ে যাক সবার জীবন।