জগতজুড়ে টিউলিপ ফুলের সৌন্দর্যের খ্যাতি ছড়িয়ে আছে। সৌন্দর্য ওদীর্ঘস্থায়িত্বের কারণে এর জনপ্রিয়তা আদিকাল থেকে। ব্যাপক আকারে বাণিজ্যিক চাষের পাশাপাশি অনেকে টবেও এই ফুলের চাষ করে থাকে।পৃথিবীজুড়ে টিউলিপ নামে পরিচিত হলেও এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Tulipa।
ফুলের রাজ্য নেদারল্যান্ডসে উৎপত্তি হলেও বাংলাদেশের যশোরের গদা খালি, গাজীপুরের শ্রীপুর, পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় দৃষ্টিনন্দন এই ফুলের চাষ অব্যাহত গতিতে এগিয়ে চলছে। শীত প্রধান দেশের ফুল টিউলিপ দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। প্রযুক্তি গত সহায়তা পেলে এদেশের ফুল চাষীরা টিউলিপ চাষে বিপুল আর্থিক সফলতা বয়ে আনতে পারবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট মহল। টিউলিপ লিলিয়াসিয়ে পরিবারের অন্তর্গত একপ্রকার বর্ষজীবি ও কন্দযুক্ত সপুষ্পক উদ্ভিদ।টিউলিপ ফুলের অনেক প্রজাতি রয়েছে। আকৃতি এবং ফুলের বর্ণ অনুসারে বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ ফুলের দেখা পাওয়া যায়। অনুমান করা হয় পৃথিবীতে ১০০ টিরও বেশি টিউলিপের প্রজাতি আছে। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো রয়েছে সংকর জাত।
বিভিন্ন প্রকার টিউলিপের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি Red Cross Tullip,Tulipa Orphanidea,Flax-Leaved tulip,Garden Tulip,Tulipa Suaveolens,Tulipa Humilis,Ladz Tulip,Candia Tulip) টিউলিপ ফুলের উৎপত্তি স্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সর্বজনীন মতে নেদারল্যান্ডস কে তার জন্মস্থান বলে শিকার করা হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন,এই গাছ পামির মালভূমি ও হিন্দুকুশ পর্বতমালা অঞ্চল থেকে উদ্ভুত হয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। অটোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকেই এই ফুলের পরিচিতি রয়েছ বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে এটি এশিয়ার দেশীয় ফুল। মূলত মধ্য প্রাচ্য, ইরান, আফগানিস্তান এবং চীনে প্রাকৃতিকভাবে টিউলিপ ফুল ফুটতে দেখা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশেও বিভিন্ন পরিসরে এই ফুলের চাষ শুরু হয়েছে। এবং দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে। প্রজাতি অনুযায়ী টিউলিপ গাছের উচ্চতায় বিভিন্নতা রয়েছে। তবে সাধারণত ৪ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত উচ্চতাসম্পন্ন টিউলিপ গাছ দেখা যায়। টিউলিপ বর্ষজীবী একপ্রকার পুষ্পজাতীয় উদ্ভিদ। বসন্তকালীন ফুল হিসেবে এটি পরিচিত। এটি একটি বাল্বস উদ্ভিদ অর্থ্যাৎ বাল্ব বা মুকুল থেকে জন্মায়। অধিকাংশ টিউলিপই ডাঁটা থেকে একটি মাত্র মুকুলের মাধ্যমে জন্মায় এবং বেড়ে উঠে। কিছু ভিন্ন প্রজাতি রয়েছে যেগুলোর একটি ডাঁটায় কয়েকটি ফুল ফোঁটে, তবে তার সংখ্যা খুবই অল্প। টিউলিপের বাল্বগুলো প্রায় ৩ সেন্টিমিটার উঁচু এবং প্রশস্ত ব্যাসের হয়ে থাকে। ভূগর্ভস্থ অবস্থাতে এর বৃদ্ধি হয় এবং তুলনামূলক ছোট ছোট শিকড় গজায়।
পাতা: একেকটি পাতার দৈর্ঘ্য ১০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থে ২-৩ সেমি. পর্যন্ত হয়। পাতার রঙ নীলাভ সবুজ বর্ণের। পাতাগুলো প্রান্তযুক্ত হয়ে প্রসারিত। একটি টিউলিপ গাছের ডাঁটায় ২-৬টি পাতা গজায়। একটি ডাঁটায় খুব বেশি পাতা গজায় না।প্রজাতিভেদে পাতার সংখ্যা ১২ টি ও হয়ে থাকে। টিউলিপ ফোঁটে বসন্তে। টিউলিপ ফুল বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। লাল, কমলা, হলুদ, সাদা, গোলাপী ইত্যাদি। তবে খাঁটি নীলাভ রঙের টিউলিপ কখনও দেখা যায় না।টিউলিপ ফুল বেশ জমকালো এবং আড়ম্বরপূর্ণ। এদের আকার কাপ কিংবা তারার আকৃতির হয়ে থাকে। ফুলে থাকে তিনটি পুষ্পদল। এছাড়াও তিনটি বাহিঃদলও রয়েছে। যে কারণে এর ভেতরের অংশ বাহিরের তুলানায় গাঢ় রঙের দেখায়। গাছে থাকা অবস্থায় টিউলিপ ফুল ২ মাস পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।তবে টবে রাখা অবস্থায় তার স্থায়িত্ব কমে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে নিয়মিত পানি পরিবর্তন করতে হয়। ফুলের পর টিউলিপ ফল জন্মায়। এই ফল অনেকটা ক্যাপসুল আকৃতির। পাতার মোড়কে ঢাকা থাকে এটি।
বীজ: ফলের মোড়কের দুই সারিতে বীজ থাকে। বীজগুলো হালকা বা ঘন বাদামী রঙের হয়ে থাকে। এবং এগুলো খুবই পাতলা আবরণবিশিষ্ট। টিউলিপ গাছে ফুল ফোঁটা শেষ হয়ে গেলে সাধারণত এটি মরে যায়। সেসময় কান্ড কেটে বাল্বটি মাটিতেই রেখে দিলে পরের শীতে আবার আপনাআপনিই এর প্রতিস্থাপন হয়। টিউলিপ বর্ষজীবি উদ্ভিদ। সুতরাং এর আয়ু ১ বছর। আর টিউলিপ ফুলের আয়ু গাছে থাকা অবস্থায় ২ মাস। সাধানরণত বাল্বসের সাহায্যে টিউলিপ গাছের বংশবৃদ্ধি করা হয়। তবে চাইলে বীজ দিয়েও করা হয়। কিন্তু তা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া বাল্ব এর মাধ্যমেই গাছটি প্রতি বছর প্রতিস্থাপিত হয়। যেহেতু টিউলিপ বসন্তকালীন ফুল তাই শীতকালে এর বাল্ব রোপন করতে হয়। কয়েক সপ্তাহ পর বসন্ত কালেই টিউলিপ ফুল ফোটা শুরু করে। টিউলিপ বাল্ব হিম প্রতিরোধী। সর্বনিন্ম -১০ক্ক থেকে সর্বোচ্চ ৪০ক্ক সেন্টিগ্রেডপর্যন্ত হিম প্রতিরোধ করতে পারে। নেদারল্যান্ডে জাতীয়ভাবে টিউলিপ ফুলের কদর রয়েছে। এমনকি টিউলিপ ফুল দেশটির জাতীয় প্রতীকও। প্রতিবছর দেশটিতে টিউলিপ উৎসব পালন করা হয়।বসন্তে যখন বিঘা বিঘা জমি টিউলিপ ফুলে ছেয়ে যায় তখন হাজার হাজার দর্শনার্থী ভীড় করে জমিগুলোয়। তখন সারা দেশে এটি উৎসবে পরিণত হয়। এই উৎসবকে সামনে রেখে কোন কোন স্থারে সম্পূর্ণ টিউলিপ বাগান গুলো এমনভাবে সাজানো হয় যেন একেকটি বাগান একেকটি অবয়ব প্রদর্শন করে। অর্থ্যাৎ কোন একটি অবয়ব বা ডিজাইন অনুযায়ী টিউলিপ চারা লাগানো হয়। ফুল ফোঁটার পর তা অপরূপ হয়ে ওঠে। এছাড়াও এই উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম আয়োজন করা হয়।টিউলিপ ফুল এবং এর বর্ণ নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম প্রচলিত ধারণা রয়েছে। এবং এগুলো খুব আড়ম্বরতায় পালন করা হয়।