কুয়াকাটা পৌরবাসীর প্রাণখ্যাত কুয়াকাটা খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। দীর্ঘ প্রায় ৬০ একর আয়তনের অন্তত পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটির দুই পাড়ে দখলদারের তান্ডব চলছে। আরসিসি পিলার করে দখল করা হয়েছে। খালটি রক্ষার নামে এক বছর আগে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে পুনঃখনন করা হয়েছে। কিন্তু বছর না যেতেই খালটিতে এখন হাঁটু পানিও নেই। কোথাও কোথাও কৃষিক্ষেতের মতো মনে হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ খালের সীমানা চিহ্নিত না করেই দখলদারদের স্থাপনা অপসারণ না করে নামকাওয়াস্তে খনন করা হয়। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ দেখানো হলেও বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বর্তমানে খালটিতে পৌরবাসীর পারিবারিক, খাবার ও আবাসিক হোটেলের সকল ধরনের বর্জ্য ফেলা হয়। এটি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খাপড়াভাঙ্গা নদীর থেকে ফাঁসিপাড়া স্লুইস থেকে শুরু হওয়া এ খালটি কচ্ছপখালী হয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার মাঝখান দিয়ে নবীনপুরে গিয়ে মিশেছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ নবীনপুরের অংশ দখল করে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ আটকে কয়েকটি পুকুর করা হয়েছে। পৌরএলাকা জুড়ে খালটির পাড়ে পাকা-আধাপাকা স্থাপনা করা হয়েছে। মহিপুর ভূমি অফিসের দেয়া তথ্যমতে খালটি অবস্থানভেদে প্রস্থ ছিল ৬০ থেকে এক শ’ ফুট। এসএ জরিপে খালটির আয়তন ছিল ৬০ একর ৫৯ শতাংশ। কিন্তু বর্তমান বিএস জরীপে দেখানো হয়েছে কুয়াকাটা মৌজায় ১২ একর ৩৫ শতাংশ আর আলীপুর মৌজায় ২৫ একর ৪৩ শতক। মোট ৩৭ একর ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে সাত একর লতাচাপলী ইউনিয়নে, বাকি অংশ কুয়াকাটা পৌরসভায়। কুয়াকাটা মৌজার বিএস দাগ ২০৮৯ ও ২৫৪২। আর আলীপুর মৌজার দাগসমুহ ৫১৭৯, ৫১৭৬, ৫১৪৫, ৫০৪৬ ও ৪১৫০। তবে পরিবেশ কর্মীদের দাবি এসএ নকসা অনুসারে ৬০ একর ৫৯ শতাংশ খালের সীমানা চিহ্নিত করার পরে খালটি উদ্ধার করে ফের খনন করা জরুরি। নইলে কুয়াকাটার টেকসই উন্নয়ন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ খালটির সঙ্গে পৌর এলাকার সকল ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্ভরশীল। রয়েছে সংযোগ। তবে এই খালে বহু বসতবাড়ি এবং আবাসিক হোটেলের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার সংযোগ দেয়া রয়েছে। যা অপসারণ করা প্রয়োজন। খালটি উদ্ধারে এখনই উদ্যোগ নেয়ার দাবি সচেতন মহলের। কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানান, খালটি রক্ষায় তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। খালের কালভার্টের পাশের মাছের বাজারটি একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। তাইলে খালে বর্জ্য ফেলা কমবে। এ ছাড়া খালটি খনন করে সৌন্দর্যবর্ধণের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তিনি জানান। কলাপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, খালের দখলদার উচ্ছেদ এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণে প্রশাসনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।