নিজ এলাকা থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপণ্ডসমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শান্ত কুমার রায়, ওই প্রত্যারক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের নির্মল রায়ের ছেলে। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭ ব্যাক্তি নির্মল রায় ও তার ছেলে শান্ত রায়কে অভিযুক্ত করে মঙ্গলবার রাতে নবীনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আরও অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে হতিগ্রস্তরা। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়ে টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে সলিমগঞ্জ এলাকা।
সরেজমিনে জানাযায়, শান্ত কুমার রায় রাজনীতির পাশাপাশি এলাকায় সিগারেটের এজেন্ট ও র্স্বণের ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলো, চট্টগ্রামে তার পিতার কয়েকটি স্বর্ণের দোকান রয়েছে এমন কথা এলাকায় প্রচলন ছিলো। সেই নাম ডাক ব্যাবহার করে তার বাবার সহযোগিতায় এলাকায় বিস্বস্ত হয়ে উঠে, অপর দিকে আ.লীগ,যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় নেতাদের সাথে সেলফি তুলে তা ব্যবহার করে স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে ছিলো দাপটি নেতা,ওই সকল সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার ঘনিষ্ঠজনদের টার্গেট করে ব্যাংকের রেটের চেয়ে উচ্চ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সিগারেট ব্যবসা ও স্বর্ণের ব্যবসায় ইনভেস্ট করার কথা বলে নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ বাজার থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অতিমুনাফার আশায় এলাকার অনেক মানুষ ও বাজারের ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে টাকা জমা না রেখে শান্ত’র হাতে তুলে দেন। গত কয়েক বছর ধরে তার সাথে লেন-দেন ঠিক ঠাকভাবেই চলছিলো। গত শনিবার ও রোববার অনেকের টাকা ফেরৎ দেওয়ার তারিখ ছিলো, ওই দিন থেকে শান্ত উধাও,তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। শুরু হয় কানাঘুষা,বেড়িয়ে আসতে থাকে একের পর এক টাকা নেওয়ার তথ্য।
অভিযোগকারীরা হলেন, নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়াইল গ্রামের হক সাব ৪০ লাখ, মো.সুজন মিয়া ২০ লাখ,আব্বাস উদ্দিন ২০লাখ ৬০ হাজার,সগির মিয়া ১২লাখ, শ্যামল চন্দ্র দাস ৮লাখ ৬০ হাজার, অক্লান্ত চন্দ্র দেব নাথ ৩ লাখ, নিলখী গ্রামের খোরশেদ আলম ৫ লাখ,থোল্লাকান্দি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ৩৯ লাখ, থোল্লাকান্দি গ্রামের আতিকুর রহমান রনি,৩লাখ, বড়িকান্দি ইউনিয়নের মুক্তারামপুর গ্রামের শাহ জালাল ৫৩লাখ, ধরাভাঙ্গা গ্রামের বাবলু মিয়া ১১লাখ, বাড়াইল গ্রামের মাহফুজুর রহমান ৩লাখ, নরসিংদীর বাদল মিয়ার ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শান্ত ও তার বাবা নির্মল রায়। অপরদিকে সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদ পাইয়ে দেবার কথা বলে রিফাত আহম্মেদ থেকে ৬লাখ, বড়িকান্দি ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম থেকে ১লাখ হাতিয়ে নিয়েছে শান্ত।
অভিযোগকারী মো. হক সাহেব জানান, শান্ত ও তার বাবা ব্যবসার কথা বলে আমার কাছ থেকে প্রায় সময়ই টাকা নিতো, আবার ফেরৎও দিয়ে দিতো, সর্ব শেষ ৪০ লাখ নিয়েছে, অন্য কারও কাছ থেকে টাকা নিতো এটা আমার আগে জানা ছিলো না, এখন শুনতে পাঁচ্ছি আমার মতো ৩০ থেকে ৪০ জনের কাছ থেকে সে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। মো.সুজন মিয়া বলেন, শান্ত আমার বন্ধু ছিলো,তার বাবা চট্টগ্রামে স্বর্ণের ব্যবসা করে,স্বর্ণ ক্রয় করার কথা বলে কয়েক দিনের জন্য আমার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়েছে, টাকাগুলো আমি বিভিন্ন ভাবে সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম,গত শনিবার আমার আমার টাকা ফেরৎ দেওয়ার কথা ছিলো,রাত থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, শান্তকে অনেক বিশ্বাস করতাম বলেই আমি ৮লাখ টাকা দিয়েছিলাম। শাহ জালাল বলেন, আমি বিকাশের ব্যবসা করি, স্বর্ণের চালান এসেছে বলে আমার কাছ থেকে ৫৩ টাকা নিয়েছে চেক ও ষ্টাম্পের মাধ্যমে। অনেকের ধারনা, টাকাগুলো আত্মসাধ করতে শান্ত চোরাই পথে ভারতে পালিয়ে গেছে। ১৮ ফেব্রুয়ারী তার মোবাইল ফোনের সর্বশেষ লোকেশন দেখাচ্ছে কুমিল্লার সীমান্ত এলাকায়। শান্ত’ টাকা নেওয়ার সময় ব্যাংককের চেক ও ষ্টম্পে স্বাক্ষর দিয়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, আবার অনেকে কোন ডকুমেন্ট ছাড়াই তাকে বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছে।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুউদ্দিন আনোয়ার বলেন, মঙ্গলবার রাতে বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের নির্মল রায় ও তার ছেলে শান্ত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।