বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি বছর ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যায়। যাদের ২০ শতাংশের বয়স পাঁচ বছরের কম। বাংলাদেশে নদী-নালা, খাল-বিলের অভাব নেই। প্রচুর বৃষ্টিপাতও হয়। বলা যায় জলের সঙ্গেই বাঁধা আমাদের জীবন। তাই দেখা যায় বাংলাদেশে প্রতি বছর দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রায় ৩০ হাজার শিশু মারা যায়। আর এদের অর্ধেকেরও বেশির মৃত্যু ঘটে পানিতে ডুবে। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার দিনদিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে এক থেকে চার বছর বয়সি শিশুদের মৃত্যুর ৬৭ শতাংশের জন্য দায়ী পানিতে ডুবে মারা যাওয়া। আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে দেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে কয়েক শতাংশ। দেশে প্রতিদিন ডুবে মারা যাচ্ছে ৪০ শিশু। বয়স বিভাজনে এদের মধ্যে ৩২ জনই চার বছরের কম বয়সী। গত বছরের পানিতে ডুবে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলো ৪১২ জন নারী, ৭০৮ জন পুরুষ ও ৬৬৪ জন শিশু। সবচেয়ে বেশি শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চট্টগ্রাম জেলায় (১৩২ জন), দ্বিতীয়ত, নেত্রকোনায় (৬৭ জন), এরপর যথাক্রমে কক্সবাজার (৬৫ জন), চাঁদপুর (৫৫ জন) ও সুনামগঞ্জ (৫৪ জন)। গ্রামের ৮০ ভাগ মানুষই কৃষি নির্ভরশীল। শিশুকে একা রেখে মা-বাবা নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে যায় সেই সময়ই দুর্ঘটনা গুলো বেশি হয়ে থাকে। নদী, পুকুর, জলাশয়, নালা বা খালে পড়ে অধিকাংশ শিশুরই মৃত্যু হয়। শিশুদের মধ্যে যারা কেবলমাত্র নতুন হাঁটতে শিখেছে তারাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। সাধারণত শিশু ৯ মাস বয়সে পৌঁছালে ঝুঁকি বেড়ে যায়। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত তত্ত্বাবধানের অভাবই এর মূল কারণ। আইসিডিডিআরবির এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, শতকরা ৬১ ভাগ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায় দিনের প্রথম ভাগে। এ সময়টায় বিশেষ করে তাদের মায়েরা গৃহস্থালি এবং রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত থাকেন। শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ শিশু মারা যায় নিকটবর্তী কোন পুকুর কিংবা ডোবায় পড়ে। পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি শিশু মারা যায় বছরের মে থেকে অক্টোবরের মধ্যে। বর্ষার মৌসুমে নদী-নালা, ডোবা, পুকুর বৃষ্টির পানিতে ভরে থাকে। এ সময় পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর শতকরা ৮২ ভাগ ঘটনা ঘটে। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুহার ঠেকানো খুব কঠিন নয়। সরকারের একার পক্ষে এটা রোধ করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে হতে হবে একটু সচেতন। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় কিশোর ভালমতো সাঁতার না জেনেই নদী বা সৈকতে নামে, যা প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেশে শিশুদের সাঁতার শেখানোর একটি কর্মসূচি গত বছর শেষ হয়েছে। ওই সময়ে ২ লাখ ৯৮ হাজার শিশুকে সাঁতার শেখানো হয়। চলমান আরেকটি কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে আরও ২ লাখ শিশুকে সাঁতার শিখতে পারবে। এ ছাড়া শিশুদের পাঠ্যপুস্তকেও ‘সাঁতার শেখার গুরুত্ব’ বিষয়ে অধ্যায় সংযুক্ত করতে হবে। অভিভাবকদের পুকুর পাড়ে বেড়া দিতে হবে, শিশুদের জন্য দিবাযতœ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণে রাখাতে হবে। তাছাড়া শিশুদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হলে বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশ রোধ করা সম্ভব হবে।