রংপুরের পীরগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে। বেসরকারি সংস্থা ‘এসডিআই’ এর পক্ষ থেকে অনুসন্ধানের পর ঝরেপড়া প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ৭০টি উপ-আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে পাঠদান করানো হচ্ছে। অবশ্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ এ তথ্য মেনে নিতে নারাজ। বিষয়টা নিয়ে শিক্ষা বিভাগ অসন্তুষ্ট। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক বিভাগ শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রতিবেদনও দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর দেশে ঝরেপড়া শিশুদের (৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী) জন্য শিক্ষামূলক প্রকল্প ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন কর্মসূচি’ (পিইডিপি-৪) গ্রহণ করেছে। ওই প্রকল্পের অধীনে বেসরকারি সংস্থা ‘এসডিআই’ (সেল্ফ ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ) পীরগঞ্জে জরিপ চালিয়ে দুই হাজার ৭৫২ শিশুকে ঝরেপড়া শিক্ষার্থী হিসেবে শনাক্ত করে। এ তথ্য অনুমোদনের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেয়া হলে তিনি তা অস্বীকার করেন। ওই কর্মকর্তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরে ওই তথ্যের বিরুদ্ধে পত্রও দেন। পরে সরকারিভাবে পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার ২৩৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় (আওতাভুক্ত) জরিপ চালিয়ে মাত্র ৮৬ জন ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর তথ্য সংক্রান্ত প্রতিবেদন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করেছে। ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে ১ হাজার ৬১১ জন, ৯৯৫ জন শিশু অন্য প্রতিষ্ঠানে পড়ছে, ৬০ জনের পরিচয় নেই। শুধু ৮৬ জন ঝড়েপড়া রয়েছে। এই বিশাল তথ্যের ঘাপলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষা বিভাগের চোখ ছানাবড়া হয়েছে। এসডিআই কর্তৃপক্ষ জানায়,পীরগঞ্জে ঝরেপড়া ২ হাজার ৭৫২ জন শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। নানান কারণে তাদেরকে পড়াশুনা বঞ্চিত দেখানো হয়েছে। ওই শিশুদেরকে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা দিতে উপজেলায় ৭০ টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীদেরকে ৬ মাস করে ১ম, ২য় ও ৩য় শ্রেণিতে এবং ১ বছর করে ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণিতে শিক্ষা দান করা হবে। প্রতিজন শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১২০ টাকা করে উপবৃত্তি, বই, খাতাসহ শিক্ষা উপকরণ এবং স্কুল ড্রেস দেয়া হবে বলেও প্রকল্পের বরাদ্দ রয়েছে। প্রতিটি স্কুলে মাত্র ১ জন শিক্ষক প্রতিদিন ৩ ঘন্টা করে পাঠদান করবেন বলে জানা গেছে। মাসে তার বেতন ৫ হাজার টাকা। অপরদিকে ওই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন ম্যানেজার (মাসে বেতন ২৫ হাজার টাকা), ৫ জন সুপারভাইজার (মাসে বেতন ১৫ হাজার টাকা) এবং একজন অফিস সহায়ক (মাসে বেতন ৮ হাজার টাকা) হিসেবে পীরগঞ্জে কাজ করছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারি বরাদ্দ তছরুপ করতেই ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর নামে বানিজ্য করা হচ্ছে। এ উপজেলায় কমবেশি একশত শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়া থাকতে পারে। কারণ এখন প্রতিটি শিশুর পরিবার সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি কেজি স্কুলেও পড়াশোনা করাচ্ছেন। উপ-আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন ছিল না। এসডিআই এর পীরগঞ্জ উপজেলা ম্যানেজার মোক্তার হোসেন বলেন, আমরা জরিপ চালিয়ে যে তথ্য পেয়েছি, তার ভিত্তিতেই স্কুল প্রতিষ্ঠার পর পাঠদান করাচ্ছি। তিনি তাদের জরিপের তথ্যই সঠিক বলে দাবি করেছেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিক উজ্জামান বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পীরগঞ্জে জরিপ চালিয়ে যে তথ্য দিয়েছে, তা সঠিক নয়। আমরা বিভিন্ন ক্লাস্টার এবং শিক্ষকদের দিয়ে জরিপ চালিয়ে মাত্র ৮৬ জন শিশুকে ঝড়েপড়া হিসাবে চিহ্নিত করেছি।