আজকের শিশুরাই আগামীর সক্ষম নাগরিক, এ লক্ষ্যে প্রতি বছর ১৭ মার্চ পালিত হচ্ছে জাতীয় শিশু দিবস। তবে এই দিনটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন হিসেবেই বাঙালি জাতির কাছে বেশি সুপরিচিত। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রীয় ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন ওই সময়ের মন্ত্রীসভা। ১৯৯৭ সাল থেকেই দিবসটি পালন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে এ দিনটিকে সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়। শিশু দিবস পালনকারী প্রথম দেশ তুরস্ক। তুরস্কের অধিবাসীরা শিশু দিবস প্রথম পালন করেন ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল। দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে শিশুদের গুরুত্বকে মনে করেই এই দিনটি পালিত হয়। এছাড়াও,এই দিনে শিশুদের অধিকার সম্পর্কে সব মানুষকে আরও সচেতন করার চেষ্টা করা হয়। শিশুরা যাতে সঠিক শিক্ষা পায়, দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা পায় সে ব্যাপারেও প্রচার করা হয় এই দিনটিকে উপলক্ষ করে। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর দরদ ছিল অপরিসীম। শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন তিনি। তার জন্মদিনে তিনি শিশুদের সঙ্গে কাটাতে পছন্দ করতেন। ওইদিন শিশুরা দল বেঁধে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে যেতো। এসব সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে তার জন্মদিনটাতে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তাঁর জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
প্রিয় বাংলাদেশকে শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করার নতুন শপথ নিতেই পালিত হয় জাতীয় শিশু দিবস। শেখ মুজিবুর রহমানের কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন অসামান্য গৌরবের। তাঁর এ গৌরবের ইতিহাস থেকে প্রতিটি শিশুর মাঝে চারিত্রিক দৃঢ়তার ভিত্তি গড়ে উঠুক এটাই জাতীয় শিশু দিবসের মূল প্রতিপাদ্য। প্রতিবছরের মতো এবারও সারা দেশে শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে পালন করা হবে দিবসটি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। দিনটিতে সাধারণ ছুটির পাশাপাশি এর তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশ বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হবে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার। পাশাপাশি বিভিন্ন মসজিদে মোনাজাত, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা সভা।
তবে দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, যে রাষ্ট্রের অজস্র-অসংখ্য শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে, নির্যাতনের মাধ্যমে তাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, শিশুদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে মাদকদ্রব্য পাঁচারের কাজে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে জড়িয়ে রাখা হয়েছে লক্ষাধিক শিশুকে। শিশুদেরকে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করা হচ্ছে। শিশু ধর্ষণের সংখ্যা আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাঁচ্ছে। শিক্ষার নামে শিশুদের কাঁধে চড়িয়ে দেয়া হচ্ছে রাজ্যের বই। সে সব বইয়ের অধিকাংশের জ্ঞান কিংবা ওজন-কোনটাই বহন করার ক্ষমতা শিশুদের নাই; সে রাষ্ট্রে ঘটা করে এমন শিশু দিবস পালনের তাৎপর্য কোথায় ? তবুও বলব, আজ আবারও নতুন করে শপথ নেয়া হোক, আমাদের শিশুদেরকে আমরা নিরাপদে এবং ভালো রাখবো।
আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুরাই আগামীদিনে দেশ গড়ার নেতৃত্ব দিবে। তরুণ প্রজন্মকে এই মহান নেতার আদর্শ থেকেই দেশ গড়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। যারা বাংলাদেশকে বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করে তাদের মাঝেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকবেন জন্ম থেকে জন্মান্তর। এছাড়াও সব শিশুর সম-অধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি বাবা-মা, পরিবার ও সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। শিশুর প্রতি সহিংস আচরণ এবং সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এই হোক আমাদের মুজিববর্ষে জাতীয় শিশু দিবসের আহ্বান।