মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ৭৫ ভাগ শিশু অপুষ্টির শিকার। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ বেশি মাত্রায় অপুষ্টিতে ভুগছে। যদিও স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে অপুষ্টি দূর করতে সরকারি-বেসরকারি নানা পদক্ষেপ ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তার পরেও গত এক বছরে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির এ তীব্রতম মাত্রার প্রকোপ বেড়েছে। তবে বর্তমানে অপুষ্টিকে দেখা যাচ্ছে শিশুর শারীরিক ও মানসিক উন্নতির সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে। দেশে শিশুর অপুষ্টি মারাত্মক একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউনিসেফ ও অন্যান্য সংস্থার মতে, অপুষ্টির প্রধান ও প্রত্যক্ষ দুটি কারণ হচ্ছে রোগব্যাধি ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব। এছাড়াও অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতি মায়েদের অপুষ্টির কারণেও শিশুর জন্মের সময় ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হওয়া এটি একটি বড় কারণ। এর ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং এটা অপুষ্টির সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ও প্রাণঘাতী ধরন। তবে এর প্রধান কারণ নিয়মিত খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অনুপস্থিতি। এ ছাড়া অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর পিতা-মাতার অসচেতনতাও সংকট মোকাবেলায় বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দেখা দিচ্ছে, যদিও আমাদের বর্তমান সরকার সরকারিভাবে পুষ্টির উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও পুষ্টি নিয়ে সচেতনতামূলক কাজ করছে তবুও প্রচুর পুষ্টিহীন শিশুর জন্ম হচ্ছে। আমাদের দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে পুষ্টি কর্মী রয়েছে। পুষ্টি কর্মীদের কাজ হচ্ছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে উঠান-বৈঠক করে মা ও শিশুকে পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন এবং তাদের পরীক্ষা করা। তবে আমাদের দেশে সরকারিভাবে কাগজে কলমে কাজ হয় ঠিকই কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তার প্রয়োগ কম। পুষ্টি কর্মীরা সবাই যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। তাদের অবহেলার কারণে সরকারের এ উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। যথাযথ তদারকি না করার কারণে পুষ্টি কর্মীরা দুর্নীতি করার সাহস পাঁচ্ছে। আরেকটি কারণ হচ্ছে পুষ্টি কর্মীদের বদলীর ব্যবস্থা নেই। একজন পুষ্টি কর্মী অবসর না নেয়া পর্যন্ত এক জায়গাতেই কাজ করে থাকেন। এতে করে তাদের কাজে একঘেয়েমি ও অবহেলা নিত্যদিনের ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। তাই পুষ্টি কর্মীদের বদলীর ব্যবস্থা করা দরকার। পুষ্টি কর্মীদের কাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা ও তাদের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা জরুরী। তারা যদি দায়িত্ব সহকারে কাজ করে তাহলে দেশের শিশুর অপুষ্টি জনিত রোগ কমে যাবে। ফলে শিশু মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে। অপুষ্টির কারণে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে শিশুদের। অপুষ্টি দূর করতে শিশুর সুষম খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এটা শুধু শিশুই নয়, কিশোর-কিশোরীসহ সব বয়সের মানুষের জন্যও প্রযোজ্য। সরকারের এ কাজকে বাস্তবায়ন করতে হলে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে পুষ্টি-হীনতার কারণ, পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার প্রভৃতি উদ্যোগ নিতে হবে। সঠিক প্রচারণা ও শিক্ষাই পারে দেশের এ সমস্যার সমাধান করতে। বাংলাদেশে নানা দিবস পালিত হলেও এখনো পুষ্টি দিবস পালন নিয়ে কেউ ভাবছেন না। তবে পুষ্টি-দিবস পালিত হলে হয়তো দেশের মানুষ পুষ্টি সম্পর্কে আরও সজাগ হবে। এ উপলক্ষে সভা সেমিনার আয়োজন করতে হবে। স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের এ উদ্যোগে অংশগ্রহণ করে সকলকে সচেতন করা যেতে পারে। তা হলেই দেশ পুষ্টিহীনতার হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে আশা করছি।