দেশের মানুষ ভালো নেই। নিত্য পণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এখন জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা ক্রমেই কষ্টকর হয়ে উঠছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ২০২২ এর প্রতিবেদন অনুসারে, গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে চাল ও আটার দাম কমেছে। তবে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের খরচ বেড়েছে। ফলে সামগ্রিক ভাবে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে। তবে এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে দেশের ৫৩ শতাংশ মানুষ। খাদ্যের দাম বাড়ায় তারা তাদের জীবনযাত্রার অন্যান্য খরচ কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন মানুষের সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য নূন্যতম যতটা খাবার দরকার তার দাম এক বছরে বেড়েছে ১২ শতাংশ। গত ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে অর্থাৎ একমাসে বেড়েছে ৪ শতাংশ। বেঁচে থাকার জন্য নূন্যতম খাবার কেনা বাবদ মাসে মাথাপিছু এখন খরচ দু’হাজার ২৩৯ টাকা। যা উপার্জন করা গরীবের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২২ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তায় ভুগছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যে ৫৩ শতাংশ মানুষ পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলতে গিয়ে জীবন যাপন ও খাদ্য বাবদ খরচ কমিয়েছে, তারা টিকে থাকতে তিনটি উপায় বেছে নিয়েছে। এর মধ্যে ২৮ শতাংশ পরিবার বাঁকিতে খাবার কিনছে। ৫৩ শতাংশ ঋণ করছে, ১৫ শতাংশ তাদের পরিবার জমি বিক্রি করছে বা অন্যত্র চলে গিয়ে থাকার চেষ্টা করছে। সার্বিক ভাবে মাত্র ১৩ শতাংশ পরিবার সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা পাঁচ্ছে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত এ প্রতিবেদন অনুসারে খাদ্য নিয়ে চাপে থাকা যে পরিবার গুলো যা কিনছে বা কিনতে পারছে,তা অধিকাংশই শিশুদের খাওয়াচ্ছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কম খাবার খাচ্ছেন। বিশেষ করে মাছ, মুরগি ,ডিম ও ভোজ্য তেলের মতো খাবার কমিয়ে দিচ্ছে। এজন্য পুষ্টি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ,যাতায়াত ও অন্যান্য বিনোদন বাবদ খরচ কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশে গম ভোজ্য তেল ও ডালের মতো খাদ্য পণ্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কোভিডের প্রভাব ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধকে প্রধান দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় চাল পুরোটাই দেশে উৎপাদন হয়। সাধারণত আমন ধান ওঠার পর বাংলাদেশে চালের দাম কমে। কিন্তু এবার সে অনুপাতে কমে নি। কারণ সরকার জ্বালানি তেল ,গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্ররায় বলছেন, ‘‘দেশে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য মজুদ আছে। রমজান মাসে আমরা এক কোটির ওপরে পরিবারকে মাসে বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল দেব। আগামী মাস থেকে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি শুরু হবে। এ ছাড়া ওমএসের আওতা এবং ট্রাক প্রতি খাদ্যের পরিমাণ বাড়ানো হবে। ফলে আশা করা যায়, খাদ্য নিয়ে যে সমস্যা চলছে, তা আর থাকবে না’’। সরকারের এ খাদ্য কর্মসূচি কি খাদ্য সংকট থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে পারবে? শুধু নিম্নবিত্তরাই নয়, এখন সংকট মধ্যবিত্তদেরও। তারা লজ্জায় না পারছেন চাইতে, না পারছেন সহ্য করতে। এ থেকে পরিত্রাণের পথ কি?