রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ধারণ করা। কিন্তু বর্তমানে হাতিরঝিলের পানিতে এখন ময়লা ও উৎকটগন্ধে হাঁটা দায় হয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত পানি পরিশোধনের ব্যবস্থা না থাকায় এ ঝিলের পানির গুণগত মান খারাপ হতে হতে প্রকট আকার ধারণ করেছে। মলমূত্র, গৃহস্থালি ও শিল্পবর্জ, পচা ক্ষুদ্র কচুরিপানা ইত্যাদির কারণে হাতিরঝিলের পানির রঙ ক্রমশ কালো হচ্ছে। দিনেদিনে সবুজে ঘেরা প্রকল্পটি সবুজতর হলেও লেকের পানি মানুষের জন্য অস্বস্থির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্মল বাতাসে শ্বাস নিতে এখানে নগরবাসীকে এখন নাক চেপে শ্বাস নিতে হয়। আশপাশের এলাকার পচা আবর্জনা ঝিলে প্রবেশ করে নষ্ট করছে পানির স্বচ্ছতা। পানি দীর্ঘদিন ঝিলে আটকে থাকায় ক্রমেই পানির রং কালো ও সবুজ হয়ে পড়ছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ঝিলপাড় ও আশপাশের এলাকায়। দূষিত পানির ওপর দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করেছে ওয়াটার ট্যাক্সি। এ থেকে সৃষ্ট ঢেউয়ের কারণে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে এর আশেপাশের পরিবেশও দূষিত হয়ে পড়ছে। দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে নিত্যই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাতিরঝিলের আশপাশের বাসিন্দাদের। বাতাসে যে মাত্রার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে, তা স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হওয়ার সম্ভাবনা প্রকট। ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি হাতিরঝিল প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অধীনে ২০০৭ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজটি করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্ক অর্গানাইজেশন। প্রায় ৩০২ একর জমির ওপর ৯৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য বৃষ্টির পানি ও পয়োনিষ্কাশনের মাধ্যমে রাজধানীর একটি বড় অংশের জলাবদ্ধতা দূর করা এবং নগরের নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। কিন্তু সৌন্দর্য বৃদ্ধির পরির্বতে এটি নগরবাসীর জন্য বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝিলের ময়লা পানি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া এ নোংরা পানির স্পর্শে এসে আশপাশের বস্তির শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে নানান চর্ম রোগে। হাতিরঝিলের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি বাস্তবসম্মত উপদেষ্টা কমিটি এবং একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। আশেপাশের এলাকা থেকে কারখানার বর্জ্য ঝিলের পানিতে পড়ে পানি দূষিত করছে তাই এই কারখানাগুলেকে সরিয়ে অন্য স্থানে স্থাপন করতে হবে। হাতিরঝিলের লেকের সঙ্গে যেসব পয়নিষ্কাশন সংযোগ রয়েছে তা অতি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। পানি সুন্দর রাখার জন্য লেকের পানিতে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মেশিনের মাধ্যমে বায়ু সঞ্চালন করতে হবে। হাতিরঝিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ও ঝিল এলাকায় ঘুরতে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে এমনকি ঢাকার বাইরে থেকেও প্রতিদিন বহু দর্শনার্থী আসেন। তাই এই ঝিলের পানি দূষণমুক্ত করা এখন সময়ের দাবি।