হিজরী বর্ষের নবম মাস রমজান। রমজানের অর্থ পুড়ে ফেলা, ধ্বংস করা, নিশ্চিহ্ন করা, রোদের প্রখরতা, উত্তাপতা ইত্যাদি। রমজান হলো সাম্য প্রতিষ্ঠার মাস,মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টির মাস। রমজান মাসে রোজা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। রোজা মুসলমানদের আদর্শ চরিত্র গঠন, নিয়মানুবর্তিতা ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের শিক্ষা দেয়। সত্যিকার মুমিন হিসাবে গড়ে ওঠার অনুপম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাস রমজান। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই এ মাসে রোজা রাখেন। রোজা দ্বারা মানুষের অন্তরে আল্লাহভীতি সৃষ্টির পাশাপাশি গুনাহের প্রতি ঘৃণা জন্মায়। সিয়াম সাধনার কারণে একজন রোজাদার বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়। সে তখন রোজার মতো ইবাদতটির বহুবিধ উদ্দেশ্য বুঝতে সক্ষম হয়। মাহে রমজানের সিয়াম সাধনায় রোজাদার ব্যক্তির মধ্যে কেবল আল্লাহভীতিই সৃষ্টি হয় না, বরং তার মধ্যে মানবিক গুণগুলোও বিকশিত হয়। ইসলাম যে পাঁচটি মূল ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, তার দুটি সালাত ও সিয়াম। আর জাকাত ও সদকা প্রদান এবং হজ্জব্রত পালন এ দুটি হলো হক্কুল ইবাদত। বাকি একটি অর্থাৎ কলেমা, সালাত, সিয়াম, জাকাত ও হজ্জ এ চারটি তার পরিপূরক ও পরিপোষক। তার মানে বান্দা প্রথমে বিশ্বাস করবে, ইমান আনবে, তারপর বাকি চারটির অনুশীলন বা আমল করবে। যারা সম্পদশালী, তাদের অনেকেরই দিন কাটে বিলাসবৈভবে। তাই রমজান এলে তারা অভুক্ত থাকার কষ্ট উপলব্ধি করতে পারেন। ফলে তাদের মনে গরীবদের প্রতি সহমর্মিতা জাগ্রত হয়। রমজানে সমাজের অবহেলিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য দান-খয়রাত, ফিতরা-জাকাত ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসে আল্লাহর দরবারে মাগফেরাত কামনা করতে হবে, গরিব-দুঃখীদের প্রতি দান-সদকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে, নিজে সব ধরনের খারাপ কাজ পরিহার করতে হবে। আশেপাশের গরিবদের খোঁজখবর রাখতে হবে। এই মাসে একটি ভালো কাজের বিনিময়ে অনেক নেকি অর্জন করা সম্ভব। কাজেই প্রতিটি মুমিনের উচিত যথাসম্ভব ভালো কাজ করা। এই পবিত্র মাসে মিথ্যা থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ একটি মিথ্যা থেকে শতশত পাপের সূত্রপাত হয়। মিথ্যার পাশাপাশি গীবত থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজেকে সকল পাপাঁচার থেকে বিরত রাখতে হবে সাথে অন্যকেও বিরত রাখতে হবে। এ মাসই আমাদের জীবন গড়ার উত্তম সময়। তাই এ মাসের করণীয়গুলো সঠিকভাবে পালন করতে হবে।