বর্তমানে দেশে বিভিন্ন যায়গায় ভবনে বিস্ফোরণ ও ভূমিধ্বসের বেশ আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। দেশের রাজধানীতে বহুতল ভবনে আগুন-বিস্ফোরণ, ভূমিকম্পে ভবনে ফাটল, ভবনধ্বস বা হেলে পড়া- ঢাকা শহরের নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এতে হতাহত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। রাজধানী ঢাকাকে দেখভাল করা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন জরিপে রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় গরমিল দেখা যায়। রাজধানীতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা ও ভয়াবহ ভবন দুর্ঘটনা ঘটে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এর তথ্য মতে, রাজধানীতে ২৬ লাখ ভবন রয়েছে। সংস্থাটির দাবি, প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ হাজার নতুন ভবন রাজধানীতে যুক্ত হচ্ছে। এসব ভবনের ৯০ শতাংশের ব্যবহার ছাড়পত্র (অকুপেন্সি সনদ) নেই। যদিও পাঁচ বছর পরপর ভবনের ‘অকুপেন্সি সনদ’ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। এজন্য ভবন মালিকদের ওপর দায় চাপাতে চায় রাজউক। সংস্থাটি থেকে আরো জানা যায় যে, ভবন নির্মাণের জন্য নকশার অনুমোদন নেওয়ার পর যখন ওই ভবনে বসবাস শুরু হয়, তখন আর কেউ রাজউকে আসে না। সেবা সংস্থাগুলো (সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, তিতাস, ডিপিডিসি) যখন তাদের সংযোগ দিচ্ছে, তখন রাজউকের কাছে আসেন না ভবন মালিকরা। তাই রাজউকের চোখের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে ভবন ব্যবহারের ছাড়পত্র। দেশে দুর্যোগঝুঁকি কমাতে ২০১৯ সালে জাতীয় পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকায় সব ভবনের কাঠামোর ঝুঁকি নিরূপণে জরিপ পরিচালনা ও তালিকা তৈরির দায়িত্ব রাজউকের। তারা আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের আওতায় নগরের তিন হাজার ২৫২টি ভবন ‘র্যাপিড ভিজ্যুয়াল অ্যাসেসমেন্ট’ করে। এর মধ্যে ৫৭৯টির ‘প্রিলিমিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (পিইএ)’ করা হয়। এতে দেখা যায়, ৪২টি ভবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নগরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা জানে না রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ ক্ষেত্রে রাজধানীর ভবনগুলোতে জরিপ চালিয়ে সেগুলো ভূমিকম্প সহনীয় কি না এ ব্যাপারে সনদ দেওয়া যেতে পারে। এখনি সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কর্তৃপক্ষ কড়াকড়ি না হলে কখনো নিরাপদ নগর গড়ে উঠবে না। তাই সরকারকে এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো দরকার। তাহলে কমবে এসব ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ফলে বেঁচে যাবে অসংখ্য প্রাণ।