গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সাম্প্রতিক আলোচিত দু’টি বিষয় স্পষ্টভাবে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, আজকাল রাজনীতিতে ক্ষমতা আর অর্থবিত্তদের দাপটই নিয়ামক শক্তি হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। ছাত্র রাজনীতিতে এসব অশুভ ছায়া ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। দখল বাজি আর চাঁদাবাজির কারণে ছাত্র রাজনীতিকে এখন আর মানুষ আগের মতো সম্মান করে না। নেতিবাচক ভাবে দেখে। অন্যদিকে ঋণ খেলাপির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের ১ শতাংশের জন্যও সাধারণ মানুষ দায়ী নয়। বড় বড় ব্যবসায়ী শিল্প পতিই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে স্বেচ্ছায় ঋণ খেলাপি হন। অবশ্য এর সাথে এক শ্রেণীর ব্যাংকারদেরও যোগসাজশ থাকে। চাকরিজীবীরাও কীভাবে গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়া যায়, সেই চিন্তায় বিভোর থাকেন। ভুলেই যান যে তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ও জনগণের সেবক। নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য অনেক সময় দেশ ও জাতির বড় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতেও পিছ পা হন না। সচেতন নাগরিক মাত্রই অবগত আছেন, বেশ কিছুদিন থেকেই প্রতিদিন ছাত্র রাজনীতির বীভৎস কর্মকাণ্ডের খবর ছাপা হচ্ছে। চাঁদাবাজি, হলের সিট দখল,সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের নির্যাতন সহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা ছাত্রনেতারা করছেন। সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থেকে তারা এসব করলেও হল প্রশাসন বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের নিবৃত্ত করতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না। ফলে ছাত্রনেতারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। এ বিষয়টিও তার বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, একটি শ্রেণি ক্ষমতা ধরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রদের ব্যবহার করতেও কুণ্ঠা বোধ করে না। ইদানীং পত্রিকা খুললেই দেখা যায়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজির নেতিবাচক খবর। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উপাঁচার্য ও শিক্ষকদের সংশ্লিষ্টতার খবরই বড় করে ছাপা হয়ে থাকেন। কেবল সনদ সর্বস্ব শিক্ষা দিয়ে দেশ ও দশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের বড় বড় ঋণ খেলাপিরা ব্যাংকের টাকা মেরে বহাল তবিয়তে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ান। অথচ ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণকারীদের নূন্যতম ঋণের জন্যে মাজায় দড়ি বেধে গ্রেপ্তার করা হয়। বড় বড় ঋণ খেলাপিদের ঋণ শোধ করার জন্য নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়া হলেও তারা তা গ্রহণ না করে ঋণ শোধের কোনো উদ্যোগ নেন না। সরকার ও নির্বিকার তাদের ঋণ আদায়ে খেলাপিদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান ছাড়া অন্য কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এখন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে রাজনীতিবিদদের চেয়ে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বেশি। তাই তারা তাদের সুবিধা মতো নানা কার্যক্রম করে থাকেন। জনগণের ব্যাংক আমানতের টাকা মেরে কেউ কেউ বিদেশে টাকা পাঁচার করেছেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ তার কার্যকাল শেষ হবার আগে জাতির সামনে দু’টি ক্ষত তুলে ধরেছেন। আমরা আশা করবো, সরকার দেশ ও জাতির স্বার্থে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যথার্থই নিরাপদ করে ছাত্র-ছাত্রীদের নির্বিঘ্নে পড়াশোনার পরিবেশ সৃষ্টি করবেন। সেই সাথে ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় এনে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন সব রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে।