রাজধানীতে কিউলেক্স মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধনের এত আয়োজনের পরও নগরীতে কমছে না মশার উপদ্রব। মশার উৎপাতে দিনরাত সমানভাবে যন্ত্রণাভোগ করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। কখনো ফগার মেশিন দিয়ে, আবার কখনো স্প্রে মেশিন দিয়ে ছিটানো হচ্ছে ওষুধ কিন্তু তারপরও কমছেনা মশার জ্বালাতন। মশা প্রতিরোধ বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতারও অভাব রয়েছে। ফলে পদক্ষেপ নিলেও খুব একটা উপকার হচ্ছেনা। বাংলাদেশে ১২৩ প্রজাতির মশা আছে। এর মধ্যে ঢাকায় কিউলেক্স ও এডিস মশার আধিপত্য বেশি। আর একটা প্রজাতির মশা ঢাকায় আছে, তবে সেটি তুলনামূলক কম। এটি ম্যানসোনিয়া মশা, কচুরিপানা ভর্তি ডোবা বা পুকুরে এগুলো বেশি জন্মায়। ঢাকায় শীতকালে কিউলেক্স মশার উৎপাত বেশি। এরপর বর্ষা মৌসুমে বাড়ে এডিস মশার প্রকোপ। খুব সামান্য পানিতেই এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে। সাধারণত পরিষ্কার পানিতেই এই মশা বংশবিস্তার করে। মানুষ যত্রতত্র পলিথিনের ব্যাগ, ডাবের খোসা, বোতল, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার বা বিভিন্ন ধরনের পাত্র ফেলে রাখে। সেগুলোতে জমা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশা অনায়াসে বংশবিস্তার করতে পারে। ফুলের টবে কিংবা ছোটখাটো পাত্রে পানি জমে থাকলে তাতেও বংশবিস্তার হয়। এডিস মশার পাশাপাশি কিউলেক্স মশা সারা বছরই দেখা যায়। তবে নভেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত এর উৎপাত বেশি। মার্চের শেষে যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন এর আধিক্য কমতে শুরু করে। যখন পানির দূষণ বাড়তে থাকে তখন কিউলেক্সের আধিক্য বেড়ে যায়। কারণ দূষিত পানিতে কিউলেক্সের মশা খাবার পায়। এডিস মশার মতো কিউলেক্স মশা ভয়াবহ না হলেও এ মশার কামড়ে অনেক সময় গোদরোগ হয়। এটি হলে হাত-পা ফুলে শরীরের বিভিন্ন অংশ বড় হয়ে যায়। ড্রেন বা ডোবাগুলোতে পানির ফ্লো যত কম থাকবে তত এই মশার প্রজনন বাড়তে থাকবে। বৃষ্টির সময়ে ড্রেন বা ডোবাতে ফ্লো থাকে বেশি। তাই তখন এর ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে পারে না। তাই বৃষ্টির সময়ে এর আধিক্য অনেক কম থাকে। মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশার বংশবিস্তারের সুযোগ নষ্ট করতে হবে। সেইসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ মশা ও লার্ভানাশক ওষুধও যথেষ্ট পরিমাণে ছিটাতে হবে। মশার হটস্পটগুলো চিহ্নিত করে সেসব জায়গায় অভিযান সর্বাধিক জোরদার করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ ও ড্রেনগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না থাকা মশার বংশবিস্তারের অন্যতম কারণ। তাই ড্রেনগুলোর ফ্লো সচল রাখতে যেখানে সেখানে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। যে কোনো উপায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এখনই মশা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে মশার ঘনত্ব বেড়ে চরমে পৌঁছাবে যা ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।