দেশে সড়ক-মহাসড়ক প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার। সড়ক যোগাযোগের বিস্তৃত এই নেটওয়ার্কে প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষের জীবন তো যাচ্ছেই, বহু মানুষ আহত হয়ে চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। এতে নিহত এবং আহত হওয়া কর্মক্ষম মানুষের পরিবারের জীবনযাত্রা কী দুর্দশা ও দুঃসহ পরিস্থিতিতে নিপতিত হয়, তার কোনো হিসাব নেই। অল্প দক্ষ বা অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানোই সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। তাই বেপরোয়া গাড়ি চালাতে গিয়ে যাতে জীবনহানি না হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। পরিবার সবসময়ই চায় আপনি এবং আপনার প্রিয় গাড়ি দুটোই থাকুক নিরাপদ। দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া এমন ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। তবে সড়ক চালকদের বেপরোয়া আচরণ, অদক্ষ চালক, অসচেতনতা, ফিটনেস বিহীন যানবাহন, সড়কের দুর্দশা, ধীরগতির অবৈধ যানবাহন ইত্যাদি নানা কারণ চিহ্নিত হয়ে আছে। এ কারণগুলোর সমাধান করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যেত।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার পেছনে মানুষের হাত রয়েছে। জেনেশুনে এবং ইচ্ছাকৃত ভুল করছে গাড়ি চালকরা। আরেকটু গোঁড়ার দিকে গেলে, এই ভুল করছে পরিবহন মালিক এবং আরও গভীরে গেলে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। গাড়ি চালকদের বেপরোয়া মনোভাব ও অদক্ষতা তাদের জানাশোনার মধ্যেই রয়েছে। তারা নিজেদের অদক্ষতা জেনে বুঝেই গাড়ির স্টিয়ারিং ধরছে। গাড়ি মালিকরাও তাদের জ্ঞাতসারেই অদক্ষ চালকদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। আর সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আইনের যথাযথ প্রয়োগে উদাসীনতা ও শৈথিল্য রয়েছে। কাজেই, দুর্ঘটনা যে শুধুই দুর্ঘটনা, এতে মানুষের হাত নেই-এ অজুহাত দেয়ার সুযোগ নেই। বলা যায়, জানাশোনার মধ্যে থেকেই দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঘটানো হচ্ছে। যাত্রীদের যানবাহনে উঠিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী করা হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যদি চালকদের ডাটাবেজ তৈরি করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করত, তাহলে অদক্ষ চালকের সংখ্যা কমে যেত। হাইওয়ে পুলিশ যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করত তাহলে, গাড়ি চালকরাও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাতে পারত না।
বাস-ট্রাকের অনেক চালকের কাছ থেকে জানা যায়, তাদের প্রায় সব চালকই ট্রিপ অনুযায়ী মালিকের কাছ থেকে টাকা পান। তারা মাসিক বেতনভুক্ত নন। এজন্য ট্রিপ বাড়ানোর জন্য পথে গতি বৃদ্ধি করে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানো হয়, এতেই দুর্ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ ট্রিপ বাড়িয়ে বাড়তি রোজগারের জন্য তারা শুধু নিজের জীবনের ঝুঁকিই নিচ্ছে না, যাত্রীদের জীবনও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। কিন্তু এর দায় নিতে চায় না কেউ, চলে একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর খেলা। বাস্তবে দেশের উন্নয়ন ও সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা কোনোটি ঠিকভাবে হচ্ছে না। এজন্য যতটুকু আন্তরিকতা ও সততা দরকার সরকারের তা নেই। প্রতিদিন সড়কে ঝরছে প্রাণ। প্রতিদিনই খবরের কাগজে ভেসে উঠছে বীভৎস সব লাশের ছবি। চালকরা অনেক সময় ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালায়, যার ফলে একসময় নিজের অজান্তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। তাই চালকদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কোনোভাবেই অসুস্থ বা ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না। এজন্য আমাদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। সরকার, চালক, মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে- মনে রাখতে হবে, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।