আমাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে নাটক। আর সমাজে এর অবদানকে তুলে ধরতেই শুরু হয় বিশ্ব থিয়েটার দিবস। ১৯৬১ সালে আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইন্সটিটিউট (আইটিই) কর্তৃক বিশ্ব থিয়েটার দিবসের প্রবর্তন হয়। প্রতিবছর ২৭ মার্চ আইটিই কেন্দ্রসমূহ এবং আন্তর্জাতিক থিয়েটার কমিটি এ দিবসটি পালন করে আসছে। প্রথমত বিশ্ব থিয়েটার দিবসের আন্তর্জাতিক বার্তা ১৯৬২ সালে ফ্রান্সের জিন কোকটিয়াও লিখেছিলেন। প্রথমে হেলসিঙ্কি এবং তারপর ভিয়েনায় ১৯৬১ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত আইটিইর নবম আলোচনাসভায় আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইন্সটিটিউটের ফিনিশ কেন্দ্রের পক্ষে অধ্যক্ষ আর্ভি কিভিমায় বিশ্ব থিয়েটার দিবস উদযাপনের প্রস্তাব দেন। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কেন্দ্রসমূহে এটাকে সমর্থন দেয়ার পরই দিবসটির বিশ্বব্যাপী প্রচলন শুরু হয়। দিবসটি উদযাপন করতে বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চনাটক অনুষ্ঠান প্রদর্শিত হয়। বিশ্বের নাট্যকর্মী ও শিল্পীদের মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপন ও নাটকের শক্তিকে নতুন করে আবিষ্কার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশেও উদযাপন করা হয় দিবসটি। দিবসটি পালনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বের সব দেশের নাট্যকর্মীদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন, সম্প্রীতি, উদ্দীপনা সৃষ্টি এবং এর মাধ্যমে নাটকের উন্নয়ন সাধন করা।
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৮২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিশেষ মর্যাদায় এই দিনটি উদযাপিত হয়ে আসছে। ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সটিটিউট (বাংলাদেশ কেন্দ্র), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ সম্মিলিতভাবে এ দিবসটি উদযাপন করে। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে স্বাধীনতা পূর্বকালে যারা নাটক রচনা করেছিলেন তাদের মধ্যে প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ, আ ন ম বজলুর রশীদ, নূরল মোমেন, মুনীর চৌধুরী, আসকার ইবনে শাইখ, সিকান্দার আবু জাফর, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, সাঈদ আহমেদ প্রমুখ অন্যতম। স্বাধীন বাংলাদেশে নাট্যচর্চা একটি উদ্দীপনা হিসেবে তরুণ প্রজন্মকে মঞ্চ সংলগ্ন করে। তরুণ প্রজন্ম নাটককে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে একটি সামাজিক আন্দোলন রূপেও প্রতিষ্ঠা করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন আকাক্সক্ষা সমকালীন তরুণ প্রজন্মকে শানিত চেতনায় উজ্জীবিত করেছিল বলে তাদের সঙ্গে মঞ্চের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক। বাংলাদেশের মঞ্চ নাটককে মুক্তিযুদ্ধের সার্থক ফসল হিসেবেও অনেকে মনে করেন।
স্বাধীন দেশে নতুন প্রেরণায় মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আবদুল্লাহ আল মামুন, মামুনুর রশীদ, সৈয়দ শামসুল হক, সেলিম আল দীন, আল মনসুর প্রমুখ বাংলাদেশের মঞ্চকে নতুন উদ্দীপনায় জাগিয়ে রাখেন। নতুন নতুন নিরীক্ষায় নতুন নতুন নাট্যকার ও নতুন নতুন নির্দেশকের আবির্ভাব ঘটে এ সময়ে। ফলে, মঞ্চ নাটক নিয়ে মানুষের আগ্রহ ও উদ্দীপনাও বিস্তৃত হতে থাকে। নিরীক্ষা ধর্মী বিভিন্ন নাটক দর্শনে দর্শকের মধ্যেও বিশেষ ধরনের রুচিবোধ তৈরি হয়। দেশীয় নাট্যকারদের পাশাপাশি একাধিক নাট্যদলের পরিবেশনায় বিদেশি নাট্যকারদের নাটকও জনপ্রিয় হতে থাকে। বিশ্ব থিয়েটার দিবস সব নাট্য শিল্পীদের কাছে বিশেষ আনন্দের। বিভিন্ন নাটকের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করা হয়। এই বিশেষ দিনে সম্মান জানানো হয় সকল নাট্য শিল্পীদের। গোটা পৃথিবীতে শিল্পের যত রূপই থাকুক না কেন, নাটকের মর্যাদা সব সময় উচ্চস্তরে।