নাটোরের বড়াইগ্রামে প্রকল্প শেষের দুই মাস পরও মজুরী পাননি ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিকরা। এতে এ প্রকল্পের ২৮ জন সর্দারসহ মোট ৯২৩ জন শ্রমিক অর্থাভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কাজ শেষের এতোদিন পরও মজুরী না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৬ নভেম্বর থেকে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির কাজ শুরু হয়। ২৮টি প্রকল্পের বিপরীতে মোট এক কোটি ৪৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এসব প্রকল্পে ২৮ জন সর্দারসহ মোট ৯২৩ জন শ্রমিক কাজ করেন। তার মধ্যে জোয়াড়ী ইউনিয়নে ১৩৯ জন, বড়াইগ্রামে ১৪৭ জন, জোনাইলে ১৩৩ জন, নগরে ১৬৭ জন, মাঝগাঁওয়ে ১৪০ জন, গোপালপুরে ৯৯ জন ও চান্দাইয়ে ৯৮ জন শ্রমিক কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে সর্দাররা প্রতিদিন ৪৫০ টাকা ও শ্রমিকরা ৪শ টাকা করে মজুরী পাওয়ার কথা। গত ২১ জানুয়ারী প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু অদ্যাবধি এসব শ্রমিকদের মজুরী পরিশোধ করা হয়নি।
সোমবার বড়াইগ্রাম ও জোয়াড়ী ইউনিয়নের কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিকরা জানান, তারা সপ্তাহে ৫ দিন করেছেন। প্রতি বৃহস্পতিবারে এক সপ্তাহের কাজের বিল এক সঙ্গে দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। পুরো ৪০ দিন কাজ শেষ হলে মাত্র ১৫ দিনের কাজের বিল দেয়া হয়েছে। এরপর পুরো দুই মাস পেরিয়ে গেলেও বাঁকি বিল দেয়া হয়নি। মাটি কাটার মত কষ্টকর কাজ করেও বিল না পাওয়াটা খুবই দু:খজনক বলে জানান তারা।
প্রতাপপুর গ্রামের শ্রমিক মহেলা বেগম জানান, আমরা দিন আনি, দিন খাই। সপ্তাহে পাঁচ দিন হিসাবে ৪০ দিনের কাজে প্রায় দুই মাস লেগেছে। এ সময়ে অন্য কোন কাজও করতে পারিনি। ধার করে, দোকান বাঁকি রেখে খাওয়া পড়া চালিয়েছি। এখন সবাই টাকা চাচ্ছে। কিন্তু বিল না পেয়ে তাদের টাকা দিতে না পেরে খুব বিপদে আছি।
শ্রীরামপুর গ্রামের হাওয়া বেগম জানান, সন্তানদের কথা ভেবে কর্মসৃজন কর্মসূচির প্রকল্পে কাজ করেছি। কাজ শেষ হয়েছে দুই মাস আগে। কিন্তু এখনও অর্ধেকের বেশি টাকা পাইনি। যে দোকান থেকে বাঁকি নিয়েছি, টাকা দিতে না পারায় তারাও আর চাল-ডাল দিচ্ছে না। ছেলেমেয়েরা প্রাইভেট পড়ে, তাদের বেতনও দিতে পারছি না।
জোয়াড়ী ইউনিয়নের কুমরুল এলাকার শ্রমিক রুস্তম আলী জানান, রোজা থেকে কাজ করতে পারি না। ৪০ দিনের কাজের বিলটা পেলে একটু শান্তিতে রোজা করতে পারতাম। কিন্তু বিল না পাওয়ায় রোজা থেকেও অন্যের জমিতে শ্রম দিতে হচ্ছে। এ কষ্টের কথা কার কাছে বলবো। একই রকম কথা জানান সরিষাহাট গ্রামের জাহানারা বেগম, তারানগর গ্রামের লাভলী বেগম ও প্রতাপপুর গ্রামের আশরাফুল ইসলামসহ অন্যান্য শ্রমিকরা।
বড়াইগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুর ইসলাম সিদ্দিকী জানান, সকাল-বিকাল যখন যেখানে দেখা হচ্ছে শ্রমিকরা বিল চাচ্ছে। কিন্তু কোন উত্তর দিতে পারছি না। এতে শ্রমিকদের সাথে আমাদের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বিল না পাওয়ায় শ্রমিকদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, শ্রমিকদের কাজের মজুরীর বিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আমরাও বারবার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি। আশা করছি অল্প দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ে প্রত্যেক শ্রমিকের মোবাইলে রকেট নম্বরে বিলের টাকা চলে যাবে।