গাছ আমাদের অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায়ও গাছ বা বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। বৃক্ষ পরিবেশের অতিরিক্ত তাপমাত্রা শোষণ করে পরিবেশকে যেমন নির্মল রাখে তেমনি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে প্রাণীর বেঁচে থাকার মূল উপাদান অক্সিজেন নির্গমন করে। কিন্তু জনসংখ্যার চাপে দিনে দিনে প্রতিনিয়ত গাছ নিধন হচ্ছে। এর কারণে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে; আবহাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গাছ নিধনের কারণে বৃষ্টিও হচ্ছে না। বৃষ্টির অভাবে আমাদের নিত্যজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। আর সেই সঙ্গে গাছ নিধনের ফলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে; বাস্তুসংস্থান ভেঙে পড়ছে। গাছ, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ ও অণুজীবের আশ্রয়স্থল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমান সময়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ দেশের বনাঞ্চল সংকুচিত হয়ে যাওয়া। নির্বিচারে বন উজাড় ও জনসংখ্যার চাপে দিনে দিনে তা আরও হ্রাস পাঁচ্ছে। প্রতি বছরই কারণে-অকারণে প্রচুর গাছ কাটা হয়, রোপণ করা হয়, তাও আবার পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এদিকে বনাঞ্চল বা বনভূমি দিনে দিনে উজাড় হচ্ছে। ফলে বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে। কালবৈশাখী ঝড়, সাইক্লোন, অকাল বন্যা প্রভৃতি দেখা দিচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য যে কোনো দেশের ২৫% ভূমিতে বনজঙ্গল থাকা দরকার। সেই তুলনায় বাংলাদেশে গাছ নিধনের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে বনভূমি নেই। গত বছরে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) বনবিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের সাড়ে ১৩ শতাংশ বনভূমি। বনজ দ্রব্য পরিবহন নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০১১ অনুযায়ী, ব্যক্তিমালিকানার বাগান থেকে গাছ কাটতেও বন বিভাগের অনুমতি লাগে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার বার বিপর্যয়ে পড়া সুন্দরবন প্রকৃতির হাত থেকে রেহাই পেলেও কিছু অসাধু বনরক্ষক আর স্বার্থলোভী বাওয়ালীদের হিংস্র থাবা থেকে রেহাই পাঁচ্ছে না সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য। সুন্দরবন লোপাট করে সুন্দরী, ধন্দুল, পশুর, গেওয়াসহ অবৈধ কাঠ পাঁচার চলছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ফাতরা থেকে সুন্দরী গাছ কেটে ট্রলার ভর্তি করে নিয়ে আসা হয় উপজেলার লতাচাপলি ইউনিয়নের নাইউরি-পাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে। এভাবে প্রতিদিন রাতের অন্ধকারে ভ্যানগাড়ির আলো নিভিয়ে সুন্দরীসহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ পাঁচার করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সুন্দরবনের চেয়ে বড় বন্ধু আর নেই আমাদের। নির্বিকারে বৃক্ষ নিধন সুন্দরবনকে শুধু মরু ভূমিতেই পরিণত করবে না দক্ষিণ অঞ্চলের অস্থিত্ব বিলীন হবে। সুতরাং কাঠ পাঁচার রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই বন ভূমি উজাড় হয়ে পড়বে। তাই সুন্দরবন সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সকলের।