জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের মাদারেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধে এমএমসি’র সভাপতির স্বাক্ষর জাল ও সরকারি বরাদ্ধকৃত অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মাদারেরচর গ্রামের বাসিন্দা জামিল মিয়া তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও খোদ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরাও তার প্রতি নাখোশ। তবে এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদা বেগম।
অভিযোগে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১অক্টোবর সহকারী শিক্ষক থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন মাহমুদা বেগম। মাদারেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে রুটিন মেইনটেনেন্স বাবদ ৪০ হাজার,স্লিপ বাবদ ৭০ হাজার ও প্রাক প্রাথমিকের ১০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। নামমাত্র কাজ করে পুরো টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্থ বছরে ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ দুই লাখ টাকা, স্লিপ বরাদ্ধ বাবদ ৭০ হাজার টাকা,প্রাক প্রাথমিকের বরাদ্ধ ১০ হাজার ও কোভিড ১৯ বাবদ ১০ হাজার টাকা বরাদ্ধ পান। বরাদ্ধকৃত টাকার আংশিক কাজ করেছেন তিনি। ২০২১-২২ অর্থবছরেও স্লিপ বরাদ্ধ ৭০ হাজার টাকা,কোভিড-১৯ এর ১২ হাজার ও প্রাক প্রাথমিকের জন্য বরাদ্ধকৃত ১০ হাজার টাকার কাজ না করে নয় ছয় হিসাব দেখিয়েছেন তিনি। ২০২২-২৩ বছরে কোভিড-১৯ এর জন্য ১২ হাজার টাকার কোনও কাজই করেননি প্রধান শিক্ষক মাহমুদা বেগম। অভিযোগ রয়েছে এমএমসি কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া রেজুলেশন তৈরি করে প্রধান শিক্ষক এসব অনিয়ম ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
অভিযোগকারী জামিল মিয়া বলেন, প্রধান শিক্ষকের কর্মকান্ডে অতিষ্ট এলাকাবাসী। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলো প্রায় ৪৫০ জন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা কমতে থাকে। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ১৪০ জন। তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।
এ ব্যাপারে এমএমসি কমিটির সহ-সভাপতি মো.গোলাম ফারুক জানান,মাহমুদা বেগম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমতে থাকে। তার নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে তিনি হুমকি দেন। তার আচরনে কমিটির সদস্য ও সহকারী শিক্ষকরাও অতিষ্ট। কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জাল করেই তিনি সকল কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদা বেগম বলেন,আমি কোন অনিয়ম করিনি। কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের অবগত করেই সকল কাজ করেছি। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়।
এ ব্যাপারে মাদারেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমএমসি’র সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম জেহাদ বলেন,তার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কমিটির সদস্যদের সাথেও তার বনিবনা নেই। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা দিনদিন কমছে। অনেক কিছুই আমাকে অবগত করা হয়না। তাই আরো দায়িত্বশীল হয়ে স্বচ্ছতার মাধ্যমে কাজ করতে তাকে মৌখিকভাবে একাধিকবার বলেছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু হাসান মো: রেজাউল করিম বলেন,এখনো কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন,অভিযোগ পেয়েছি। কমিটি করে তদন্ত দেওয়া হবে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।