মানুষের মৌলিক চাহিদার (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য) মধ্যে খাদ্য একটি প্রধান ও অন্যতম মৌলিক চাহিদা। জীবন ধারণের জন্য খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। খাদ্য গ্রহণ ছাড়া মানুষসহ কোনো প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারে না। তবে সে খাবার অবশ্যই হতে হয় বিশুদ্ধ। দূষিত বা ভেজালমিশ্রিত খাদ্য মানুষের জন্য স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়ে থাকে। খাদ্যে ভেজাল মেশানো বাংলাদেশের এক ভয়াবহ সমস্যা। সময়ের সাথে সাথে এর মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলেছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে মানুষ যখন অর্গানিক আর ভেজালবিহীন খাবারের দিকে ঝুঁকছে সেখানে আমাদের দেশে চলছে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর তুমুল প্রতিযোগিতা। ব্যবসায় অধিক লাভের আশায় মানুষ তার মনুষ্যত্ব খুইয়ে ফেলছেন দিনকে দিন। খাদ্যশস্য, ফলমূল, সবজি ইত্যাদি উৎপাদনে রাসায়নিকের ব্যবহার, মাঠ থেকে উত্তোলন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, আবার খাবার তৈরির সময়ও তাতে থাকছে ভেজালের স্পর্শ। খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটি গুরুতর অপরাধ। ভেজাল খাদ্য মানুষের জন্য কখনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। যা একটি দেশ ও জাতির জন্য চরম আশঙ্কাজনক। ভেজালমুক্ত খাদ্য যেমন দেহের ক্ষয় পূরণ, বৃদ্ধি সাধান এবং রোগ প্রতিরোধ করে,তেমনি ভেজালযুক্ত খাদ্য গ্রহণের কারণে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে জীবন বিপন্ন পর্যন্ত হতে পারে। খাদ্যসামগ্রীতে যেসব কেমিক্যাল মিশিয়ে খাদ্যের মান নিম্নমুখী করা হয় সেগুলোর মধ্যে ফরমালিন বহুল পরিচিত। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজি, মাছ টাটকা ও দীর্ঘসময় সংরক্ষণ করে রাখার জন্য ফরমালিনের ব্যবহার করা হয়। মাছ, আপেল, আঙ্গুর, চিনি, মিষ্টি ইত্যাদিতে ফরমালিন, মাছের ফুলকাতে রঙ, মুড়িতে ইউরিয়া, চানাচুরে পোড়া মবিল, আখের গুড়ে হাইড্রোজ, কলাতে কৃত্রিম হরমোন মিশিয়ে খাদ্যর মান কমিয়ে ফেলা হয়। ভেজালযুক্ত খাবার গ্রহণের কারণে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভুগছে, সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে অগণিত শিশু। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রতি বছর ভেজাল খাদ্য খেয়ে ৩ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে মরণব্যাধি ক্যানসারে, প্রায় দেড় লাখ আক্রান্ত হচ্ছে ডায়াবেটিসে এবং প্রায় ২ লাখ আক্রান্ত হচ্ছে কিডনি রোগে, পাশাপাশি গর্ভবতী মায়ের শারীরিক দেখা দেয় বিভিন্ন জটিলতা এবং গর্ভজাত শিশু হয়ে পড়ে বিকলাঙ্গ। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন এবং ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ আইন-২০২২-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। এই আইনে বাজারে অনিরাপদ বা ভেজাল খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করলে অনূর্ধ্ব ৫ বছর কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। খাদ্যে ভেজাল রোধে নিরাপদ খাদ্য আইনের সঠিক প্রয়োগ হওয়া প্রয়োজন। শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন বা শাস্তির মাধ্যমে ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। এর জন্য প্রয়োজন নৈতিকতাবোধের। খাদ্যে ভেজাল রোধে সামাজিক সচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।