সারাদেশ ভিক্ষুকমুক্ত করার লক্ষ্যে এ পেশায় যুক্তদের পুনর্বাসনে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন ঘটছে না, বরং উল্টোটাই দৃশ্যমান। রাজধানীতে কয়েকগুণ বেড়েছে ভিক্ষুকের সংখ্যা। বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলির মোড়ে, কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকান, চায়ের দোকান, বিপণিবিতান, বেশি যানজটের সড়ক ও ট্রাফিক সিগন্যাল, মসজিদ, বাস, ট্রেন, লঞ্চ টার্মিনাল, এটিএম বুথ, শপিং মলের সামনে হাজার হাজার ভিক্ষুক ভিক্ষা করছেন। যা অতীতের তুলনায় অনেক গুন বেশি। এই ভিক্ষাবৃত্তিকে অনেক পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে ফলে একদিকে যেমন ভিক্ষুকের সংখ্যা কমছে না অন্যদিকে ভিক্ষাবৃত্তি ঘিরে তৈরি হচ্ছে একধরণের সিন্ডিকেট। ২০১০ সালে ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করে সরকার। সিদ্ধান্ত হয়, প্রথমে রাজধানী ঢাকা হবে ভিক্ষুকমুক্ত। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচন করা হয় ঢাকার সাত এলাকা। পদক্ষেপ নিলেও প্রয়োগের অভাবে ওইসব এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত করা যায়নি। ভিক্ষার মূল পুঁজি সহানুভূতি আর ধর্মীয় অনুভূতি। তবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ। এরপরও অনেক সময় অসহায়, দুর্বল, দরিদ্র ও পঙ্গুরা ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েন অপছন্দনীয় হওয়া সত্ত্বেও। অপমানকর হলেও পুনর্বাসন আর ভরণপোষণের ব্যবস্থা না থাকায় তারা ভিক্ষা করতে বাধ্য হন। ভিক্ষুকমুক্ত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পুনর্বাসনের জন্য বিপুল সংখ্যক ভিক্ষুককে আটক করা হলেও ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা না থাকায় তাদের ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু বর্তমানে অসহায় ভিক্ষুক থেকে পেশাদার ভিক্ষুকের সংখ্যা বেশি। কয়েক দশক ধরে রাজধানী ঢাকায় গড়ে উঠেছে চক্রের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি। রীতিমতো এটিকে অনেকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। দিনকে দিন রাজধানীতে ভিক্ষুকের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। রাস্তাঘাট, অলিগলি সবখানেই আছে দুষ্টচক্রের অধীনে ভিক্ষায় নিয়োজিত ভিক্ষুকরা। এই ভিক্ষুক কমানোর জন্য সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা পেশাদার ভিক্ষাবৃত্তি করছেন, তাদের পুনর্বাসন করা সম্ভব নয়। কারণ তারা পুরর্বাসনকেন্দ্র থেকে কিছুদিন পরই পালিয়ে যায়। আর অভাবে পরে ভিক্ষাবৃত্তি করছেন যারা, তাদের থাকাণ্ডখাওয়ার ব্যবস্থা না করে কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। ভিক্ষাবৃত্তি জীবিকা নির্বাহের সহজতর উপায় হওয়ার কারণেও নিম্নবিত্তদের কেউ কেউ এ বৃত্তিতে আসছেন তাই দেশের সব জায়গায় কারিগরি শিক্ষার স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ভিক্ষুক নির্মূলে পুনর্বাসনের সঙ্গে সঙ্গে পেশাদার ও মৌসুমী ভিক্ষুকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, পেশাদার ভিক্ষুকদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ভিক্ষাবৃত্তির সহজ কাজ। এ কাজে লাগে না কোনও দক্ষতা বা যোগ্যতা। সরকার কিংবা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলো এদেরকে কোনও কাজে প্রশিক্ষণ দিতে পারলে ধীরেধীরে ভিক্ষাবৃত্তির হার কমবে।