বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চলছে বহুমুখী অস্থিরতা। খাদ্য মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছুঁয়েছে, জ্বালানির দামও আকাশছোঁয়া। ফলে সবকিছুর দামই এখন বাড়তি। করোনা মহামারির পর বিশ্ব অর্থনীতি যখন একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে, ঠিক তখনই দেশে দেশে অর্থনীতিতে শুরু হয় অচলাবস্থা! বিশেষ করে গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বৈশ্বিক সামগ্রিক অর্থনীতিতে লাগে এর জোর ধাক্কা। এরপর সময় যত গড়াতে থাকে, বিশ্ব অর্থনীতিতে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে স্থবিরতা। ক্রান্তিকাল এখনো কাটেনি, বরং মহাসংকট ধেয়ে আসছে বলেই মনে হচ্ছে! ৩৯৭ বিলিয়ন ডলার জিডিপি নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ৪১তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি চীনের অবস্থাও বিশেষ ভালো নয়। চীনের সঙ্গে অনেক দেশের অর্থনীতির প্রত্যক্ষ যোগ আছে। ফলে চীনের অর্থনীতির গতি হারানোর কারণে অনেক দেশের পরিস্থিতির অবনতি হবে। চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এক বছরে ডলারের দর বেড়েছে ১৬ শতাংশ। গত ২০ বছরের মধ্যে বিশ্বে ডলারের দর এখন সবচেয়ে বেশি। আর চাঙা ডলারের প্রভাবে বিপাকে আছে ছোট অর্থনীতির দেশগুলো। সেই সাথে বিপদে পড়েছে বাংলাদেশও। মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। উদ্যোক্তাদের জন্য বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট। এতে উৎপাদনও কম হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই এল নতুন একটি বছর। অর্থনীতিতে নানা সংকটের ডালপালা মেলার মধ্যে খাদ্যপণ্যে পরনির্ভরশীলতা কমাতে সরকারের একের পর এক আহ্বান ও উদ্যোগের মধ্যেই বছরের শেষ সময়ে আমনের ভালো ফলনের খবর দিয়েছেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, খাদ্যপণ্যের অভাব নিয়ে তৈরি হওয়া ভয় অনেকটাই কেটে গেছে ও ফলন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন; আরও আশ্বস্ত করেছেন অন্য দেশের মত ততটা দুরবস্থায় নেই বাংলাদেশ। মূল্যস্ফীতি সংকটের কারণে অনেক সময় খাদ্য সংকটের আশঙ্কাও প্রকাশ পেয়েছিল অর্থনীতিবিদসহ সরকারি নীতি নির্ধারকদের মুখেও। ‘দুর্ভিক্ষের’ অশনির কথাও উঠেছে কখনও কখনও। অস্থির পণ্যবাজারে হিমশিম খেতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এ অবস্থায় আসন্ন যে কোনো ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। কেননা বিভিন্ন খাতে সতর্কতা অবলম্বন করার মাধ্যমে অর্থনীতির প্রভূত উন্নতি ঘটাতে পারে বাংলাদেশ। তাই জোর দিতে হবে বৈদেশিক মুদ্রার মূল্য হ্রাসের দিকে। পাশাপাশি ডলারের দাপটে বাংলাদেশি মুদ্রা, তথা টাকার মূল্য ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার যে প্রবণতা শুরু হয়েছে, তা থেকে নিষ্কৃতি পেতে এবং আগামী বছরগুলোতে শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে অবকাঠামো খাতে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ ধরে রাখতে টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নয়তো এ সমস্যা আরও খারাপ আকার ধারণ করতে পারে। তাছাড়া শহরাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকিও প্রবল বাড়তে পারে। ফলে মন্থর উন্নয়ন প্রকল্প, ক্রমবর্ধমান শহুরে দারিদ্র্য এবং বায়ু ও পানি দূষণের মতো সমস্যাগুলোর সমাধানেও দ্রুত ভিত্তিতে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ওপর জোর বাড়িয়ে অর্থনীতি চাঙা করতে হবে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যের পরিধি বাড়াতে হবে।