মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পড়ও মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ একটি তালিকা তৈরি করা যায়নি। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এই তালিকায় রাখা হয়নি বা অনেক সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে। আবার অনেকে অমুক্তিযোদ্ধা এর তালিকায় ঢুকে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছরেরও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করতে না পাড়া এটি একটি চরম ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই না। ১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকার, ১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকার, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এবং ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে কাজ করে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালের মার্চ মাসে এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার একটি তালিকা (অপূর্ণাঙ্গ) প্রকাশ করেছিল সরকার। মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট শাখার তথ্য অনুযায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মোট দুই লাখ ৩৫ হাজার ৪৬৭ জনের নাম বিভিন্ন সময়ে গেজেটভুক্ত হয়েছিল। আর মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা গত জানুয়ারি মাসে দুই লাখ ১৯ হাজার ৭৫৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে মাসিক ভাতা বরাদ্দ দিয়েছে। ফলে দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত তা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে এখনো। জামুকা বলছে, নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণের জন্য ৩৩ ধরনের প্রমাণক (কাগজপত্র) লাগে। অনেক মুক্তিযোদ্ধার নামই একেক নথিতে একেক রকম। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রের নামই শেষ পর্যন্ত বিবেচনায় নেওয়া হয়। অনেকের পরিচয়পত্রে দেওয়া নাম আর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম এক না থাকায় নানা সমস্যা হচ্ছে। যে কারণে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে সময় লাগছে। ৫২ বছরে অন্তত সাতবার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। আর বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বয়স, সংজ্ঞা ও মানদণ্ড পাল্টেছে ১১ বার। এমনও অভিযোগ রয়েছে টাকা দিতে পারেননি বলে অনেকে তালিকায় নাম ওঠাতে পারেননি। তাই কখনো মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নির্ভুল হবে না। শুধু অসচ্ছলদের ভাতা দেওয়ার নিয়ম করলেই তালিকা থেকে অমুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দেওয়া সম্ভব হবে। ইদানীং প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবানেরা তাঁদের দুষ্কর্ম ঢাকতে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম ওঠাতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। যদি কোনো স্বাধীন কমিশন দিয়ে এমআইএসের (ভাতা পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরকার ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা এমআইএস নামে একটি সফটওয়্যারে যুক্ত করেছে) তালিকা যাচাই-বাছাই করা হয়, তাহলে হয়তো অর্ধেকও টিকবে না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে এবং উপজেলা ও জেলা পর্যায় থেকে পাওয়া অভিযোগে জানা যাচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধাদের নানা সুবিধায় আকৃষ্ট হয়ে অনেক অমুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়েছেন এবং করাচ্ছেন। মন্ত্রণালয়ে এমন অসংখ্য অভিযোগ পড়েছে এবং তা সংশ্লিষ্ট সূত্র স্বীকারও করেছে। তাই খুব দ্রুত উপজেলা ও জেলা এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মাধ্যমে যাচাই-বাছাইসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে যোগ্যদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর অমুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা করে তাদের বাদ দেয়া গুরুত্বপুর্ণ।