যশোরের কেশবপুরে সাগরদাঁড়ি মাইকেল মধুসূদন ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করেছেন এডহক কমিটির সভাপতি। ওই বিদ্যালয়ে জাল নিবন্ধনে চাকরীরত ও এমপিও নীতিমালা বহির্ভূত শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তির কাগজপত্রে স্বাক্ষর না করায় তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গত ২০ মার্চ প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার চৌধুরী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকশিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি সাগরদাঁড়ি মাইকেল মধুসূদন ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আমানত আলী ও তাঁর ছেলে সাগরদাঁড়ি কারিগরি মহাবিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান ওলিয়ার রহমান ২০১৩ সালে আবদুল হালিম ও গাজীউর রহমানকে অত্র প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রদান করেন। বর্তমান ওলিয়ার রহমান বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। এ ক্ষমতা বলে তিনি প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনকে উপেক্ষা করে অবৈধ নিয়োগ পাওয়া ৫ শিক্ষকের এমপিও কপিতে স^াক্ষরের জন্য তার ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। ২০১৬ সালের ৯ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগ অত্র বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রাপ্ত ৭ শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরেজমিনে তদন্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শাখা অনুমোদন না থাকার পরও অবৈধভাবে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে আবদুল হালিম ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে গাজীউর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) তদন্তে এ দুই শিক্ষকের নিবন্ধন জাল প্রমাণিত হওয়ায় তাদের নিয়োগ অবৈধ বলে প্রমাণিত হয়েছে। এমপিওভুক্ত সিনিয়র ধর্মীয় শিক্ষক আবদুর রহিম থাকার পরও মোটা অংকের টাকায় অবৈধ নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষক পদে পুনরায় নজরুল ইসলামকে নিয়োগ দেয়া হয়। একই সময়ে দু‘জন ধর্মীয় শিক্ষক দীর্ঘ ১ যুগ ধরে বেতন উত্তোলন করছেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এছাড়া, জুনিয়র শিক্ষকের পদ না থাকার পরও সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে সাজ্জাত আলী ও সকল শ্রেণীতে ২য় বিভাগ না থাকার পরও মোস্তাফিজুর রহমানকে ২০০২ সালের ২৭ জুলাই নিয়োগ দেয়া হয়। যা জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা বহির্ভূত। এরপরও তারা অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার চৌধুরী অভিযোগ করেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনকে উপেক্ষা করে জাল নিবন্ধনে চাকরী প্রাপ্ত আবদুল হালিম ও গাজীউর রহমানের এমপিও কপি এবং সাজ্জাত আলী ও মোস্তাফিজুর রহমানের উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তির আবেদনে স্বাক্ষর করতে চাপ প্রয়োগ করেন। এনিয়ে সভাপতির সাথে বিরোধ হয়। এরই জের ধরে স্বীকৃতি প্রাপ্ত বেসরকারি স্কুল শিক্ষকগণের চাকুরীর শর্ত বিধিমালা- ১৯৭৯’ এর ১৩ (২) ধারা এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা- ২০২১ এর ১৯ ধারা লঙ্ঘন করে কোন কারণ দর্শনো নোটিশ ও ম্যানেজিং কমিটির সভা ছাড়াই তিনি আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। তিনি অবৈধ এ বরখাস্তাদেশ স্থগিতসহ বিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে চলমান এডহক কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে মহামান্য হাইকোর্টেও রিট পিটিশন করেছেন। বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ওলিয়ার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কার্যকলাপ, অর্থ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা, পেশাগত অসদাচরণ প্রতিষ্ঠান বিরোধী বলে গণ্য হয়েছে। যে কারণে তাকে গত ১৯ মার্চ থেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদের সকল দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক গৌতম কুমার দত্তকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে আনীত ৬টি অভিযোগ তদন্তের জন্যে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠনসহ অভিযোগের সন্তোষজনক জবাব পত্র প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে দাখিল করতে বলা হয়েছে। সহকারি শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের কাগজপত্রে কোনো ত্রুটি নেই। তিনি অহেতুক হয়রানি করছেন। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গৌতম কুমার দত্ত বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষক ভূয়া নিবন্ধনে চাকরী করেন কিনা তা আমার জানা নেই। এছাড়া, আবদুল হালিম ও গাজীউর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হলেও শাখা অনুমোদন ছিল না। বর্তমান শাখা অনুমোদন হওয়ায় তাদের এমপিও‘র আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করা হচ্ছে না। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রশিদ বলেন, প্রধান শিক্ষক বরখাস্তের কথা শুনেছি। তিনি এডহক কমিটির বিরুদ্ধে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন।