প্রতি বছর বিভিন্ন দিনে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে নানা দিবস। এই সকল বৈশ্বিক দিবস বা বিশ্ব দিবস অথবা আন্তর্জাতিক দিবসগুলোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে-কোন একটি নির্দিষ্ট দিনে আন্তর্জাািতকভাবে সাম্প্রতিককালের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধি বা অতীতের বিশেষ কোনো ঘটনাকে স্মরণ করা বা উদযাপন করা। আর এ সকল দিবস গুলোর মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক শিশুপাঠ্য দিবস যা প্রতিবছর ২ এপ্রিল পালিত হয়ে থাকে। এ দিবস পালনের মূল কারণ হচ্ছে শিশুদের শিক্ষার প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। শিশুদের পাঠ্য বই পড়ার ব্যাপারে আকৃষ্ট করা। যাতে শিশুরা মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া করেন এবং পাঠ্যবইয়ে মনযোগী হন। কিন্তু অনেক শিশু রয়েছে যারা বই পড়তে পছন্দ করেন না। সারাদিন খেলাধুলা ও মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চান। তবে তাদের পড়াশোনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে তাদের পাঠ্যবই পড়ার অনুপ্রেরণা যোগাতে হবে। আমাদের দেশে অনেক শিশুই দারিদ্র্যতার কারণে পাঠ্য শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। শিশু শ্রম এখনো বন্ধ করা যায় নি। এখনও বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সহায়ক হিসেবে শিশুদের ব্যবহৃত করা হচ্ছে। যেমন বারুদের কারখানায় আতসবাজি তৈরি থেকে শুরু করে ইটভাটা, পাথরখাদান, কারুশিল্প, রাসায়নিক কারখানায়, হোটেল-রেস্তোরায় বয়ের কাজে তাদের দেখা যায়। কয়লা খাদান বা কয়লা পাঁচারের কাজে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে দারিদ্রপীড়িত শিশুরাই। মাফিয়া চক্রের একপ্রকার মুশকিল আসান যেন এরা। ভিক্ষাবৃত্তির কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে এদের। গৃহকাজ, অটোমোবাইলের গ্যারেজ, বিড়ি তৈরি, জঙ্গল মহলে পাতার থালা তৈরি, আর্বজনা ঘেঁটে কাগজ কুড়ানো, চায়ের দোকানে শ্রমিক হিসেবে এদের কাজে লাগানো হচ্ছে। রেলস্টেশন-সহ বিভিন্ন স্থানে পথ শিশুদের দেখা যাচ্ছে। যদিও শ্রম আইনে বলা রয়েছে, শিশুদের ১৮টি নির্দিষ্ট পেশায় এবং ৬৫ ধরনের কাজে নিয়োগ করা যাবে না। আমাদের দেশে আইন লঙ্ঘন করে কোনো ব্যক্তি কোনো শিশুকে নিয়োগ করলে তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত কারাবাস অথবা ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার কথা বলা হয়েছে এবং দেশে শিক্ষার অধিকার আইনে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের বিনামূল্যে এবং আবশ্যিক ভাবে স্কুলে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। মিড-ডে মিল আর বিভিন্ন ভাতার সুযোগ-সুবিধারও আশ্বাস রয়েছে। জাতীয় শিশুশ্রম নীতি অনুসারে শিশু শ্রমিকদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বিপজ্জনক পেশায় নিযুক্ত শিশুদের পুনর্বাসনে নজর দিয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত করা এবং তাদের বিশেষ স্কুলে পুনর্বাসন করার পরিকল্পনাও গৃহীত হয়। কিন্তু শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ করে সমাধান সম্ভব নয়। তাই শিশুদের বিশেষ বিদ্যালয়ে পুনর্বাসনের পাশাপাশি তাদের পরিবারগুলির আর্থিক অবস্থার উন্নতিও দরকার। তাহলে হয়তো শিশু শ্রম বন্ধ ও শিশুদের পাঠ্য শিক্ষার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের মূর্খ উজ্জ্বল করুক। এর জন্য প্রয়োজন পরিবার ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি। তার পাশাপাশি সরকার কেউ এ বিষয় গুলোর প্রতি খেয়াল দিতে হবে। সব শিশুরা সুযোগ পাক পড়াশোনার এবং সব শিশুর অধিকার সুনিশ্চিত হোক এই আমাদের প্রত্যাশা।