বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে শারীরিক অসম্পূর্ণ মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকান্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যেই দিবসটির সূচনা হয়। দিবসটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক "৬২/১৯৯ ধারা অনুযায়ী মনোনয়ন লাভ করে। দিবসটি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠনগুলোও পালন করেন। ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২ এপ্রিল দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এ দিবসটি পালিত হয়। এটি হলো ১৫তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘এমন বিশ্ব গড়ি, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত করি’। বর্তমান বিশ্বে অটিজম জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক এক হুমকি। সুতরাং অটিজম বিষয়ে সচেতনতা সবার জরুরি। এ ক্ষেত্রে অটিজম সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহ ও চেষ্টা থাকলেও উপযুক্ত তথ্য, বই-পুস্তক, গবেষণা এবং তেমন প্রচার-প্রচারণা নেই বলে সেটিও সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে মা-বাবাসহ জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে সে কাজটি কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে বিশ্বাস। দেশে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে তেমন গবেষণাকর্মও পরিচালনা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই অটিজম নির্ণায়করা ওই সন্তানের মা-বাবাকে বিষয়টির বিভিন্ন দিক নিয়ে বুঝিয়ে তাদের সজাগ করতে পারে। প্রতিবন্ধিতা কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়। সমাজের অন্য সব প্রতিবন্ধকতার ন্যায় এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন পারে এই সমস্যার সমাধান করতে। সমাজ বা রাষ্ট্রের কাজ গুটিকয়েক মানুষকে কেন্দ্র করে নয় বরং সব মানুষকে একত্র করে সামগ্রিক উন্নয়নের কথা ভাবা। হতে পারে প্রতিবন্ধী শিশুরা অন্য সব সাধারণ শিশুদের মতো নয়, তবে তাদের বুদ্ধিমত্তা, বিশেষ গুণাবলি অন্য সব শিশুদের থেকে বেশিও হতে পারে। তাদের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা, যেমন শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণীকক্ষ, বিশেষভাবে প্রণীত পাঠ্যক্রম দ্বারা শিক্ষা প্রদান করা এবং বিদ্যালয় তাদের জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে তাদের শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষালয় তৈরি করতে হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন আইন প্রণয়ন এবং আইন কার্যকরের মধ্যে পার্থক্য থাকে, এ ক্ষেত্রে তেমন অবহেলা করলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের মধ্যে তফাত না রেখে প্রতিবন্ধী শিশুদের অন্য শিশুদের মতো সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপন করার সুযোগ দিতে হবে। সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে হলে প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে রয়েছে এমন শিশু ও ব্যক্তির জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিসহ সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মানসিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ জীবন গঠনের পথকে আরও প্রসারিত করতে হবে।।আমাদের উচিত তাদের অক্ষমতাকে সরিয়ে বিশেষ গুণাবলি বিকাশের পথ সুগম করে দেয়া। তাই পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, চাকরি সব ক্ষেত্র থেকে বৈষম্য সরিয়ে তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে আমাদের অবহেলা তাদের মধ্যকার ইচ্ছাশক্তিকে নষ্ট করে দেয়, তার ফলে তারা নিজেদের সমাজের বোঝা মনে করে।