একথা সত্য যে আগের তুলনায় পার্বত্য অঞ্চলে সহিংসতা তুলনামূলক কমেছে। কিন্তু তা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। কিছুদিন পরপর সহিংসতা ও রক্তপাতের ঘটনায় পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে দেশবাসীর উৎকণ্ঠা বাড়ছে। অতিসম্প্রতি বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার খানতামপাড়ায় দুই সশস্ত্র সংগঠনের গোলাগুলিতে আটজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে রোয়াংছড়ি সদরে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেন শতাধিক গ্রামবাসী। দুর্গম খানতামপাড়ার পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সঙ্গে ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) অস্ত্রধারীদের মধ্যে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। দেড় বছরে তিন পার্বত্য জেলায় সশস্ত্র সংঘাত ও প্রতিপক্ষের হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। এমন ঘটনার পর পাহাড়ি এলাকায় সক্রিয় সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাদের কোনো সশস্ত্র শাখা নেই। এবারের ঘটনার পরও একই ধরনের বিবৃতি এসেছে। পাহাড়ে বারবার রক্ত ঝরার নেপথ্যে রয়েছে কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। গত ২৫ বছরে পাহাড়িদের সংগঠনগুলো নানাভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। শান্তিচুক্তির পরও কিছুদিন পরপর পাহাড়ে যেভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে তাতে স্পষ্ট, পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস দূর হয়নি। এ সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে সহিংসতার প্রধান কারণ আধিপত্য বিস্তার। এ ছাড়া চাঁদাবাজির মতো ঘটনাও রয়েছে। পাহাড়ে সহিংসতার এক বড় কারণ সেখানে অস্ত্রের সহজলভ্যতা। বিস্তীর্ণ অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে অবাধে অস্ত্র প্রবেশ করছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। অরক্ষিত সীমান্ত সুরক্ষিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে যেসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে তৎপরতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনে তাদের মধ্যে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে কী কী বিষয় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডসহ বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে বিরাজমান বৈরী সম্পর্কের কীভাবে ইতি টানা যায়, তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবার অবকাশ রয়েছে। এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। পাহাড়ে বসবাসকারী সব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা না গেলে সহিংসতা বন্ধে গৃহীত পদক্ষেপগুলো টেকসই হবে কি না সন্দেহ। দেশের পার্বত্য অঞ্চল ঘিরে পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। পাহাড়ে রক্তপাতের কারণগুলো দূর করা সম্ভব হলে সেখানে পর্যটন খাতের সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানো সহজ হবে। পাহাড়ে সংহিংসতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।